শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে চারটি প্রস্তাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

॥খোন্দকার আব্দুল মতিন, নিউইয়র্ক থেকে॥ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে চারটি প্রস্তাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৪শে সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ওআইসি সেক্রেটারিয়েট এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ‘রোহিঙ্গা সংকট: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুষ্ঠানে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসেফ এ আল-ওথাইমিন।
আগামী (২৭ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।
রোহিঙ্গা বিষয়ক এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নতুন প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে আমি পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। যেখানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলোর সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন, রাখাইন রাজ্যে আলাদা ‘বেসামরিক পর্যবেক্ষিত সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠা কথা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এবার আমি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে (ইউএনজিএ) উপস্থাপন করবো।
১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছে পরিষ্কার করতে হবে। এজন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী করছে সেটাও সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে।
২. বৈষম্যমূলক আইন ও চর্চা পরিত্যাগ করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন রাজ্যে ‘যাও এবং দেখ’ এই নীতিতে পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।
৩. রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েন করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গাসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) দিতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো বিবেচনায় নিতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
ওআইসির ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এক্ষেত্রে এ ইস্যুটিকে (রোহিঙ্গা সংকট ও তাদের ওপর সংগঠিত নৃশংসতা) আন্তজার্তিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) নিতে ওআইসির উদ্যোগ হবে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, এই বিষয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ওআইসি অ্যাড-হক মন্ত্রিপরিষদ গ্রুপের মাধ্যমে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মিয়ানমারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর মূল মিয়ানমারে গভীর প্রথিত। সুতরাং এ সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ভেতরেই খুঁজে পাওয়া যাবে।
এতদিনেও রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হওয়াকে দুঃখজনক মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা রোহিঙ্গা সংকটের কোনো রকম সমাধান ছাড়াই আরও একটি বছর পার করে দিয়েছি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে রোহিঙ্গারা নৃশংস অপরাধের শিকার হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আবারও বলছি, রোহিঙ্গা সংকটের মূল মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও সেখানে খুঁজে বের করতে হবে। মানবিক সহায়তা এবং অন্যান্য সহযোগিতা তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনগুলো সমাধান করে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এর স্থায়ী সমাধান গুরুত্বপূর্ণ।
আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা অবশ্যই তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সক্ষম হবে, যেখানে তারা শতাব্দির পর শতাব্দি বসবাস করেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই, নিরাপদ এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চলমান কার্যক্রম অনুসরণ করছে।
মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক নির্বাসিত ১ দশমিক ১ মিলিয়ন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা আমাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিলাম যা ইসলামের নৈতিক শিক্ষা।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে, তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে আমাদের সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে, চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। রোহিঙ্গারা ৮০০ একরের বেশি বনভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে, যাতে বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আশ্রয়, খাদ্য, স্বাস্থ্য সেবা, পানি, স্যানিটেশনসহ রোহিঙ্গাদের সবধরনের মানবিক সহায়তা দিচ্ছি। ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং পরিচালনায় ক্যাম্পগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী মোতায়েন করা হয়েছে। সড়ক-বিদ্যুৎ সরবরাহসহ নতুন ও অতিরিক্ত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ২১৯টি মেডিক্যাল সুবিধা স্থাপন করা রয়েছে। যার মধ্যে ৫০টি সরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে অধিকতর উন্নত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অধিক ঘনবসতির সমস্যা সমাধান এবং মানবিক সেবার সুবিধার্থে সুরক্ষার সমস্ত বিধান রেখে রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা ভাসানচরের উন্নয়ন করেছি। মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে উন্নত আবাসন এবং জীবিকার সুযোগও থাকবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
এ ছাড়া সভায় ওআইসিভুক্ত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সুইডেন, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, সার্বিয়া, ফিলিপিনস, গাম্বিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!