॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী শহরের ধুঞ্চি গোদার বাজার ঘাট এলাকাকে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে জরুরীভিত্তিতে রক্ষার দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে গতকাল ২৪শে সেপ্টেম্বর বিকালে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের নিকট ১৬৬ জনের স্বাক্ষরিত একটি গণপিটিশন দাখিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে গণপিটিশনটি হস্তান্তর করার সময় গোদার বাজারের এনজিএল ইটভাটার নির্বাহী পরিচালক ও নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন মোস্তফা, রাজবাড়ী সমবায় মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মেহেদী হাসান কবির, আলিফ মোস্তফা, নিজাম মন্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গণপিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, এলাকাটি পদ্মা নদীর ভাঙ্গন কবলিত মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ একটি এলাকা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত পর্যটন স্থাপনাসহ অন্যান্য স্থাপনা এবং নদী পাড়ের জমি রক্ষা, তথা শহর রক্ষা বেড়ী বাঁধকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার জন্য চলতি মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারের মাধ্যমে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছিল। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম অজ্ঞাত কারণে সেই ডাম্পিংয়ের কাজ বন্ধ করে দেন। সম্প্রতি নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকস্মিকভাবে গোদার বাজার এলাকার এনজিএল ইটভাটার একাংশ ও আশপাশের কৃষকদের ৮/১০ বিঘা ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙ্গনের বিষয়টি টের পাওয়ার সাথে সাথে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করা সত্ত্বেও তিনি তাতে কোন কর্ণপাত করেননি। ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তিনি ‘আগে ভাঙ্গুক, তারপর দেখা যাবে’-এ কথা বলাসহ নানা ধরনের নেতিবাচক কথাবার্তা বলেন। পরবর্তীতে এনজিএল ইটভাটার ২০/২৫ হাজার ইট-জমি ও কৃষকদের ফসলী জমিগুলো ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে পড়েন। পরে তিনি ঘটনাস্থল থেকে তড়িঘড়ি করে চলে যান এবং লোক-দেখানো কিছু বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা শুরু করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এই ভাঙ্গন প্রতিরোধে যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ বা জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার প্রয়োজন ছিল তা করা হয়নি। যার ফলে আগে ডাম্পিংকৃত সবই বৃথা গেছে। যদি প্রয়োজনীয় পরিমাণে ডাম্পিং করা হতো তাহলে এই অপূরণীয় ক্ষতিটি হতো না। উপরন্তু ভাঙ্গনের পর যে পরিমাণে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা প্রয়োজন সে পরিমাণেও ডাম্পিং করা হচ্ছে না। যা করা হচ্ছে তা নিতান্তই লোক-দেখানো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের মুখে শোনা যায়, বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম একজন অদক্ষ-অযোগ্য কর্মকর্তা। আগের কর্মস্থলে দায়িত্বে থাকাকালে তার অদক্ষতায় বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় জনবিক্ষোভের মুখে সেখান থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। গত কোরবানী ঈদের আগে তিনি এনজিএল ইটভাটার কর্তৃপক্ষের কাছে ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে বালুভর্তি বস্তা ডাম্পিং করে ভালোভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা’ করা বাবদ ১ লক্ষ টাকা দাবী করেন। ইটভাটা কর্তৃপক্ষ সেই টাকা না দেয়ায় তিনি ক্ষুদ্ধ হন এবং কিছুদিন পরই ‘পানি কমার পর’ আবার ডাম্পিং করার কথা বলে কাজ বন্ধ করে দেন। যার ফলে ইটভাটার পাশাপাশি আশপাশের দরিদ্র কৃষকদেরও এই ক্ষতি হলো। নির্বাহী প্রকৌশলীর অদক্ষতা ও গাফিলতির কারণে নদীর পাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে অনেক স্থানে একেবারে শহর রক্ষা বেড়ী বাঁধের কাছে চলে এসেছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় অদক্ষ, অযোগ্য ও দায়িত্বহীন নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গোদার বাজার এলাকার অবশিষ্ট পর্যটন স্থাপনা, নদী পাড়ে থাকা স্কুল-মসজিদ-বসতবাড়ীসহ দরিদ্র কৃষকদের ফসলী জমি ও শহর রক্ষা বেড়ী বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জরুরীভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। আবেদনের অনুলিপি রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পুলিশ সুপার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে প্রদান করা হয়েছে।