॥এম.এইচ আক্কাছ॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রেললাইনের পাশে লাগানো সামাজিক বনায়নের ৩টি বড় মেহগনি গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। সেই সাথে হতদরিদ্র একটি পরিবারের বসতঘরের আংশিক ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় বন কর্মকর্তারা কেটে নেয়া মেহগনির ৩টি গোলাই উদ্ধার করেছে। এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা গেছে, সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে ২০০০-২০০১ সালে স্থানীয় হতদরিদ্রদের অংশগ্রহণে গোয়ালন্দ উপজেলা বন বিভাগ বৃক্ষ রোপন করে। এর অংশ হিসেবে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাঁচুরিয়া রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেল লাইনের ২ পাশ দিয়ে ৭টি সেক্টরে ভাগ করে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপন করা হয়। এগুলো রেল বাগান হিসেবে পরিচিত। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রেলগেট হতে পাটনীবাঁধা রেলব্রীজ পর্যন্ত একটি সেক্টরে ৪৮ জন উপকারভোগী সদস্য রয়েছে। এরা সবাই এই সেক্টরের গাছগুলো তদারকি করে আসছে। গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের হাউলি কেউটিল গ্রামে পাটনীবাঁধা ব্রীজের কাছে রেললাইনের পাশে গাজী সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তার নিজ নামে একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল শুরুর উদ্যোগ নেয়। পার্শ্ববর্তী ৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি গাজী সাইফুল ইসলাম তার নিজ নামে ওই স্কুলের নির্মাণ কাজ শুরু করে। সাইফুল তার স্কুলে কাঠের প্রয়োজনে পাটনীবাঁধা ব্রীজের কাছে রেল বাগান থেকে ৩টি মেহগনি গাছ কেটে নেয়। সামাজিক বনায়নের কোন উপকারভোগী বা সংশ্লিষ্ট কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে ওই ৩টি মেহগনি গাছ কেটে নেয় বলে ওই বাগানের উপকারভোগী সদস্যরা জানায়। এছাড়া মেহগনি গাছ কেটে ওই স্কুলের জায়াগায় যাতায়াতের প্রশস্ত রাস্তাও তৈরী করেছে। রাস্তা তৈরীর সময় রেলের গায়ে থাকা হতদরিদ্র একটি পরিবারের বসতঘরের আংশিক ভেঙ্গে দিয়ে তার ভরাট করা জায়গাও দখল করা হয়। এতে হতদরিদ্র আঃ সামাদের বৃদ্ধ মায়ের বাধাও মানা হয়নি। ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলে তার জায়গা দখল করা হলেও তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনের পাশ থেকে বনায়নের ৩টি গাছ কেটে নিয়ে গাজী সাইফুল ইসলাম বিদ্যানিকেতন নামে একটি কিন্ডার গার্টেনের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। তার পাশ দিয়ে নতুন মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এ সময় দরিদ্র আঃ সামাদ খাঁর মা খোদেজা বেগম ও স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, বাড়ীতে পুরুষ মানুষ থাকে না। জোর-জবরদস্তি ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে রেলের বড় ৩টি গাছ এবং আমাদের ছাপড়া ঘর ভেঙ্গে গাজী সাইফুল রাস্তা করেছে। আমরা চেঁচামেচি করলেও সে কোন কথা শোনেনি। আমাদের পাশে এসেও কেউ দাঁড়ায়নি।
প্রস্তাবিত গাজী সাইফুল ইসলাম বিদ্যানিকেতন কিন্ডার গার্টেন স্কুলে গেলে দেখা যায়, আজমত আলী বেপারী নামের একজন শিক্ষক কিছু কাগজপত্র নিয়ে বসে আছেন। তিনি জানান, কোন গাড়ী না ঢোকার কারণে রেললাইনের পাশের দু’টি মেহগনি গাছ ছোট ভাকলা ইউপির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনকে জানিয়ে কাটা হয়েছে। একটি গাছ চেরাই করা হয়েছে। আর একটি বন বিভাগের লোক এসে নিয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, কারো ঘর জোর করে ভাঙ্গা হয়নি। তাদের অনুমতি নিয়েই ঘর সরিয়ে দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা বন কর্মকর্তা মীর সাইদুর রহমান জানান, রেললাইনের পাশে রেল কর্তৃপক্ষ এবং বন বিভাগ যৌথভাবে স্থানীয়দের উপকারভোগী সদস্যদের নিয়ে এই গাছগুলো প্রায় ২০ বছর আগে রোপন করা হয়। গাছ কাটার বিষয়টি তিনি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। এরপর একটি গাছের কাটা অংশ তারা আমার অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত গাছ কাটা আইনতঃ অপরাধ। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দেয় তা বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজবাড়ী অঞ্চলের আইডব্লিউ হাফিজুর রহমান জানান, রেললাইনের পাশের কোন গাছ কাটা হয়েছে বলে তিনি জানেন না। তবে এ ধরনের কাজ কেউ করে থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত গাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, স্কুলের প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানিয়ে গাছ কাটা হয়েছে। আমার প্রয়োজনে কোন গাছ কাটা হয়নি।