॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ীর নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান গতকাল ১৮ই জুলাই দুপুরে তার প্রথম কর্মদিবসে জেলা পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, রাজবাড়ী জেলার তুলনায় রংপুর জেলা অনেক বড় জেলা। রংপুর জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করেছি। আমার সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাজবাড়ী জেলাতেও যাতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি সেই চেষ্টা সবসময় থাকবে। আমি যোগদানের পূর্বে শুনেছি রাজবাড়ী জেলার মিডিয়া খুব শক্তিশালী।
অনেকেই বলেন পুলিশ ও সাংবাদিক একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু এটা নিতান্তই তাদের ব্যক্তিগত অভিমত। আমি মনে করি পুলিশ এবং সাংবাদিকদের পেশার ধরন একে অপরের সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত। কারণ যখন কোন অপরাধ সংঘটিত হয় তখন পুলিশের কাজ হচ্ছে সেই অপরাধের খুটিনাটি বিশ্লেষণ করে অপরাধীকে শনাক্ত করা এবং গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে তার বিচারের ব্যবস্থা করা। আর সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে অনুসন্ধানের করে সেই অপরাধীর যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে সংবাদের মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা। যেহেতু আমাদের কাজের ধরণ একই সেহেতু রাজবাড়ী জেলায় আমার কর্মকালীন সময়ে সাংবাদিকগণ বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে জেলা পুলিশকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করবে বলে আশা করি।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী জেলায় আমার প্রথম কাজ হবে রাজবাড়ী শহরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা, যাতে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এই সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে আমি রংপুর জেলায় অনেক সাফল্য পেয়েছি। যাতে রাজবাড়ী শহরকে স্বল্প সময়ের মধ্যে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা যায় সে জন্য আমি পৌর মেয়রের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
নবাগত পুলিশ সুপার বলেন, সরকার আমাদেরকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের আইজিপি’র নির্দেশনা হচ্ছে কোন রকম ভোগান্তি বা হয়রানী ছাড়া সাধারণ মানুষের সেবার জন্য কাজ করা। সেই আলোকে রাজবাড়ী জেলায় যোগদানের পরে আমি প্রতিটি থানা ও ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি সাধারণ মানুষ থানায় কোন অভিযোগ নিয়ে গেলে যেন তাদেরকে কোন রকম হয়রানী ছাড়া তার অভিযোগকে লিপিবদ্ধ করা। যাতে কেউ কোন অভিযোগ নিয়ে গেলে তাকে এক ঘন্টার বেশী থানায় অবস্থান করতে না হয়। আপনাদের সকলের জানা মাদকের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে। যদি জেলা পুলিশের কাউকে মাদকের সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় সে যত বড় মাপের কর্মকর্তাই হোক তাকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই রাজবাড়ী জেলা ছাড়তে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, সংবাদ পরিবেশনের সময় আপনাদের সাথে আমাদের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। যাতে আমরা ভুল বোঝাবুঝির কারণকে সমাধান করতে পারি সেই মানসিকতা নিয়ে আমরা কাজ করবো। সাংবাদিকদের জন্য আমার দ্বার সবসময়ের জন্য খোলা। অপরাধ সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে আপনারা যে কোন সময় আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।
পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, সাংবাদিকসহ সকলের নিরাপত্তা দেয়া পুলিশের দায়িত্ব। আমি দায়িত্বে থাকাকালে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। তিনি দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি খান মোঃ জহুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মাতৃকণ্ঠের সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন, দৈনিক জনতার আদালতের সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক, জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল কুদ্দুস বাবু, জাহাঙ্গীর হোসেন, রবিউল খন্দকার মজনু, মোঃ এজাজ আহমেদ ও কবির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) মোঃ সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) মোঃ ফজলুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল করিম, রাজবাড়ী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার, পাংশা থানার ওসি মোঃ আহসান উল্লাহ, কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি শহিদুল ইসলাম এবং ডিআইও-১ মীর্জা আবুল কালাম আজাদসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান গত ১৭ই জুলাই যোগদান করেন।