॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের আবাসন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের চাহিদামতো ভিজিডি কার্ড না পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন আবাসন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের নেতারা।
গত ১৯শে মার্চ আবাসন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি ও সম্পাদকগণ ইউপি চেয়ারম্যান এবং সচিবের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার বলেন, সরকারী নিয়ম অনুসরন করেই তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এখানো কোন অনিয়ম করা হয়নি।
অভিযোগে বলা হয়, রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্যের পরামর্শে দেবগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচটি আবাসন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের জন্য ১০০কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দ পাওয়ার পর সমবায় কর্মকর্তার উপস্থিতিতে যাচাই-বাছাই শেষে উপকার ভোগীদের ভিজিডি তালিকা প্রস্তুত করে ইউএনও’র দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। পরে ইউএনও ও সমবায় কর্মকর্তা যৌথ স্বাক্ষর করে দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে তালিকাটি জমা দেন। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব পরস্পর যোগসাজসে তালিকার বেশ কিছু নাম বাদ দিয়ে ইচ্ছেকৃত নাম দিয়ে চুড়ান্ত তালিকা করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তরে অনুমোদনের জন্য জমা দেন।
আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর সমবায় সমিতির সভাপতি জিন্নাত প্রামানিক উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রকল্পের বাসিন্দা হিসেবে রেখা(২২) নামের একজনকে দেখানো হয়েছে। যার ভিজিডি কার্ড নম্বর-৪৬৭। অথচ তার বাড়ি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাইরে। পাশের দৌলতদিয়া ইউপি’র ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আফতার উদ্দিনের মেয়ে রোজিনা (৩০)কে এই প্রকেল্পর বাসিন্দা দেখিয়ে কার্ড নম্বর-৪৬৮ দেওয়া হয়েছে।
আবাসন-১ এর সভাপতি জহর উদ্দিন মোল্লা বলেন, তার আবাসনের ৮০জনের মধ্যে ২৫জনের নামে তালিকা থেকে ৩জন রেখে ২২জনের নাম পরিবর্তন করেছে।
দেবগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বারের মেয়ে ঝরনা খাতুনের ৩বছর আগে মানিকগঞ্জ বিয়ে হয়েছে। অথচ তার নামে কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ছালেহা বেগম নামের ৭০বছরের এক বৃদ্ধার নামে কার্ড ইস্যু করেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার সাংবাদিকদের বলেন, সরকারী নীতিমালা অনুসরন করে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে বিশেষ কোন ব্যক্তি বা কারো পছন্দের নামে কার্ড দেয়া হয়নি। এছাড়া যাদেরকে বাইরের বলা হয়েছে এদের কারো বিয়ে হলেও কেউ স্বামীর বাড়ি হিসেবে বা বাবার ঘর হিসেবে আশ্রয়ন প্রকল্পেই বাস করে। আমার ইউনিয়নে অধিকাংশ মানুষ অভাবী, দরিদ্র এবং ভিক্ষুক শ্রেণীর। অনেক সময় নিয়ম মেনে চলা যায় না। কারো নাম হয়তো বাদ পড়তে পারে। এক্ষেত্রে যে বেশি অভাবী বা ভিক্ষুক তাকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাজ করতে গেলে একটু-আধটু ভুল হতেই পারে। আমিতো মানুষ, ফেরশতা নই। আমার পরিবারের কেউ তো এসব কার্ড নেয়নি। অহেতুক আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বিএম নজরুল হুদা বলেন, গত ডিসেম্বরে ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও’র নির্দেশে আবাসন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে তালিকা করেছিলাম। অধিকাংশ নাম বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান ও পরিষদের সদস্যরা অন্য এলাকার লোকের নামে কার্ড ইস্যু করা মোটেও ঠিক হয়নি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হাসান হাবিব জানান, নিয়ম অনুযায়ী ভিজিডি’র তালিকা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং তার পরিষদ থেকেই করার কথা। তারপরও ভিজিডি কার্ড বিতরণ নিয়ে যদি কোন অভিযোগ করে থাকে তাহলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।