সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটি’র মাসিক সভায় গুরুত্বপূর্ন বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০১৭

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১২ মার্চ সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক জিনাত আরা’র সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কমিটির উপদেষ্টা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, গোয়েন্দা সংস্থার এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাব, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইঞ্জিঃ মোঃ আমজাদ হোসেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার রেজাউল করিম লাল প্রমুখ।
এ সময় বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কশিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী বিভাগের কর্মকর্তাগণ, র‌্যাবের প্রতিনিধি, কমিটির সদস্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বাজার ব্যাবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী তার বক্তব্যে বলেন, সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া ঘাটে নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক একটি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হবে। যাতে পদ্মা নদীতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রোধ করা যায়। আমার চোখে দেখা রাজবাড়ীতে অনেক ইট ভাটায় অবাধে কাঠ পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কিছুদিন আগে যে ইট ভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হয় সেই ইট ভাটাকে মোবাইল কোর্ট এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে। পক্ষান্তারে ওই ইট ভাটার মালিককে মোবাইল কোর্ট থেকে বলা হয়েছে কারো মাধ্যমে সুপারিশ করলে আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা বেশী জরিমানা করা হবে। কিন্তু অধিকাংশ ভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সেখানে কোন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে না। আমি জেলা প্রশাসককে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা কেউ দুর্নীতির উর্ধ্বে নই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্নীতি বিরোধী বক্তব্য প্রদান করি, র‌্যালী করি, অনেক কর্মসূচী পালন করি কিন্তু আমাদের কাজের ক্ষেত্রে সেটির প্রয়োগ করি না। রাজবাড়ী জেলায় পাওয়ার গ্রীড নির্মাণের জন্য কিছুদিন আগে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বিদায়ী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আশরাফ হোসেনসহ অধিগ্রহণ কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্টরা জমির মালিকদের নিকট অগ্রিম চেক নিয়ে বিভিন্ন কারচুপির মাধ্যমে জমির মূল্য বাড়িয়ে ওই জমির মূল্য পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে ওই এলাকায় জমির মূল্য কোন অবস্থাতেই পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশী নয়। কিন্তু বিভিন্নভাবে কারচুপির মাধ্যমে জমির মূল্য বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা থেকে আড়াই লক্ষ টাকা শতাংশ মূল্যে জমির মালিকদের প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু এই পাওয়ার গ্রীড স্টেশনের জমি অধিগ্রহণে কারচুপি হয়েছে বিষয়তে অবশ্যই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানাচ্ছি।
এমপি আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী আরো বক্তব্যে বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মজুদ করা হচ্ছে। যার কারণে কিছুদিন আগে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লকের কিছু অংশ ভেঙ্গে নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আবার অনেক টাকা ব্যয়ে ধাওয়াপাড়ায় যে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে সেই রাস্তায় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত লোড নিয়ে বালু ভর্তি ট্রাক চলাচল করছে। সেগুলোসহ ধাওয়াপাড়া ঘাটে যে পাহাড়ের মতো বালুর স্তুপ করে রাখা হয়েছে ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো দেখা এবং তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আমাদের সকলেরই সব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা উচিত। তিনি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দালালমুক্ত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি রাজবাড়ী জেলাকে মাদকমুক্ত করতে সকলকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান এবং আসন্ন গ্রীষ্মকালে যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক থাকে তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থিত থেকে জেলার সকল বিভাগের উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পর্কে জানার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক জিনাত আরা তার বক্তব্যে বলেন, রাজবাড়ী জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সকল এজেন্সির সহায়তায় জেলার আইন-শৃঙ্খলা বর্তমানে ভালো রয়েছে। জেলার ইট ভাটাগুলোতে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম চলমান আছে। আজকের সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বালু মহালসহ অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ও যারা নদীর পাশে বালু মজুদ করেছে তাদের কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দালালমুক্ত করার প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিদ্যুতের গ্রীড স্টেশন নির্মাণের জমি সকল বিষয় বিবেচনা করে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তিনি সকলকে জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপের খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানান।
কমিটির সদস্য রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, রাজবাড়ীর সদর উপজেলার পদ্মা নদীর পাড়ে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় নদীর পাড়ে বালু রাখাসহ উত্তোলন বন্ধের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া ঘাটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, নদীর পাড়ে বালুর স্তুপ করাসহ ওই রাস্তা দিয়ে অবৈধভাবে বালু বহনকারী কোন ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। উল্টো রাস্তার বিভিন্ন স্থানে প্রতি ট্রাক থেকে ১২শত টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। কোন অদৃশ্য কারণে প্রশাসন ওই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ রাস্তার তুলনায় অতিরিক্ত লোড বহনকারী ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না তা নিয়ে রাজবাড়ীর সাধারণ জনগণের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। আমি আশা করব, প্রশাসন এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীর বক্তব্যের মতো আমরা অনেকেই জানি রাজবাড়ী সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বিদ্যুতের গ্রীড স্টেশন নির্মাণের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেখানে বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী জমির মূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশী নয়। কিন্তু সেই জমি অধিগ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির সহায়তায় প্রথমে কিছু জমির মূল্য বাড়িয়ে কয়েকগুন উচ্চ মূল্যে কেনা-বেচা করান। এরপর অধিগ্রহণকৃত জমি প্রকৃত মূল্যের চেয়ে প্রায় চার-পাঁচ গুণ বেশী মূল্য দিয়ে জমির মালিকগণকে অধিগ্রহনের মূল্য পরিশোধ করেন। এছাড়াও সভায় রেলগেটের অবৈধ ফলের দোকান, অটোরিক্সার কারণে যানজট, জেলার বাইরে স্কুলের ছেলেমেয়েদের পিকনিকে না যাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে মাইকিং ছাড়া যে কোন সময়ে মাইকিং বন্ধ করাসহ আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!