॥মোক্তার হোসেন॥ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে কলিমহর জহুরুন্নেছা শিক্ষানগরীতে পারিবারিক কবরস্থানে দাদা-দাদীর কবরের পাশে গতকাল ২০শে মে রাতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন এলাকার কৃতি সন্তান সমাজসেবী ঢাকাস্থ ডিডিসি লিমিটেডের আর্কিটেকচ বিভাগের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম নাসির উদ্দিন মিয়া।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার ডায়াবেটিস রোগ ছিল। দু’সপ্তাহ আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডিডিসি লিমিটেডের কলিমহর প্রকল্পের ম্যানেজার সুব্রত কুমার দে-এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, ইঞ্জিনিয়ার একেএম নাসির উদ্দিন মিয়া ঢাকাস্থ ডিডিসি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও দাতা ইঞ্জিনিয়ার একেএম রফিক উদ্দিন পান্না মিয়া সহোদর ভাই। তার পিতা মরহুম একেএম খলিল উদ্দিন মিয়া ফরিদপুরের জেলা জজ ছিলেন। সৃজনশীল ও প্রগতিশীল চেতনার গুণি ব্যক্তি ইঞ্জিনিয়ার একেএম নাসির উদ্দিন মিয়া ন্যাপ রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। রাজবাড়ী-২ আসনে ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন তিনি। শিক্ষা ও সামাজিক সেবামূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।
পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাংশা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ হাসান আলী বিশ্বাস মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ইঞ্জিনিয়ার একেএম নাসির উদ্দিন মিয়া একজন সাদামনের মানুষ ছিলেন। ন্যাপ রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে ঐক্যজোটের প্রার্থী হয়ে ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে পাংশায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় দলীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন তিনি। পরে নানা কারণে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ইঞ্জিনিয়ার একেএম নাসির উদ্দিন মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
জানা যায়, ঢাকা থেকে গতকাল সোমবার রাত ৭টা ২০মিনিটের দিকে পাংশার কলিমহর ইউপির কলিমহর জহুরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স পৌঁছিলে সর্বস্তরের মানুষ শেষবারের মত মুখখানা দেখতে ভীড় জমায়।
কমিউনিষ্ট পার্টির পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে পুষ্পার্ঘ দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাত সাড়ে ৭টার দিকে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন কলিমহর মধ্যপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ মোতাহার হোসেন।
জানাযার নামাজে রাজবাড়ী-২ আসনের প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য ও পাংশা উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মতিন মিয়া, পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাংশা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ হাসান আলী বিশ্বাস, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফরিদ হাসান ওদুদ, খোকসা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আমজাদ হোসেন, কলিমহর ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল জলিল মন্ডল, পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম হোসেন রোনো, হোগলাডাঙ্গী মোহাম্মাদীয়া কামিল মডেল মাদরাসার সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মীর মোঃ আব্দুল বাতেন, পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাহানারা বেগম কলেজের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম খান, পাংশা উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও কলিমহর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা রোকন উদ্দিন বিশ্বাস বকুল, কলিমহর ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুল গফুর মাস্টার, পরানপুর দাখিল মাদরাসার সুপার গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক মোঃ মোক্তার হোসেনসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অসংখ্য মানুষ জানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করেন।
জানাযার নামাজের আগে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মরহুমের বড় ভাই বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী একেএম রফিক উদ্দিন মিয়া। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে মহাখালী গাউসুল আজম জামে মসজিদে মরহুমের প্রথমবার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়বার কলিমহর জহুরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে রাত সাড়ে ৭টার দিকে জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাদা-দাদীর কবরের পাশে মরহুমের দাফন সম্পন্ন করা হয়। মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই ভাই, তিন বোন ও এক কন্যা সন্তানসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহি রেখে গেছেন তিনি।
ইঞ্জিনিয়ার একেএম নাসির উদ্দিন মিয়ার মৃত্যুতে সিপিবি’র সাবেক সভাপতি আবুল কালাম এবং দৈনিক মাতৃকণ্ঠের সম্পাদক ও রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।