মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪২ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৯

॥মোঃ জাহাঙ্গীর আলম॥ স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে বাঁচাতে হলে সমষ্টিকেন্দ্রীক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। এটা সর্বজনবিদিত যে, দীর্ঘকাল তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সুবিধা সম্প্রসারণের কথা বলা হলেও সামগ্রিকভাবে বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র খুবই হতাশাব্যঞ্জক। সমষ্টি পর্যায়ে তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রসারে একটি মাইলফলক।
দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা গ্রাম পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বাস্থ্য সহকারীরা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করছেন। তারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছেন। এক কথায় বলা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিক হচ্ছে সরকারের সর্বনিম্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো।
জনবান্ধব কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমটি ১৯৯৬ সালে গৃহীত হয় এবং ১৯৯৮ সালে বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০০০ সালের ২৬শে এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ২০০৯ সাল থেকে ২৬শে এপ্রিলকে ‘জাতীয় কমিউনিটি ক্লিনিক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। সরকারী অর্থায়নে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম প্রকল্পটি পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮ এর সূচনার মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী অর্থায়নে এখন থেকে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। অর্থাৎ সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন, বেসরকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় দেশে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইনটি প্রণয়ন করা হয়।
কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে সচল থাকে, সে জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের চিন্তা করছে বর্তমান সরকার, সেটি খুবই শুভ উদ্যোগ। বাংলাদেশ সরকার ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮’ পাস করে। এই আইনের ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল কর্মী তাদের চাকরী স্থায়ীকরণের পাশপাশি বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, পদোন্নতি, অবসর ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবে সরকারী চাকরীর মতো। এছাড়াও এই ট্রাস্ট আইনের ফলে গ্রামীণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলো। এই ট্রাস্ট আইনের আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ১৯৭৮ সালের ৬-১২ সেপ্টেম্বর কাজাখস্তানের আলমা-আতা শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে(উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ অষসধ-অঃধ) যে সকল বিষয়ে গুরুত্ব দেয় সেগুলোর অনেকগুলো অনুসরণ করা হয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি সকল স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন কর্মীকে সুরক্ষার আওতায় আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যা এই ট্রাস্ট আইনের আওতায় করা হবে।
দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে পূর্বের তুলনায় অনেকাংশেই উন্নয়ন ঘটেছে। স্বাস্থ্যসেবা সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এর সুবিধা জনগণ ভোগ করছে। বর্তমান প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার যে অগ্রগতি তা কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্যই সাধিত হয়েছে। দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৩ হাজার ৮১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক সচল রয়েছে। একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কাজ করছেন। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে মোট ভিজিটের সংখ্যা ৭৪ কোটিরও অধিক। সুবিধাবঞ্চিতসহ প্রান্তিক/গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে ৩২ ধরণের ওষুধ। সরকারের আরও এক হাজার ২৯টি ক্লিনিক বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে এ সকল কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ প্রদানসহ সপ্তাহে তিন দিন পুষ্টি বিষয়ে এবং তিন দিন পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে সেবার পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক পরামর্শও প্রদান করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে আপামর জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা দেশের স্বাস্থ্য খাতে এই প্রথম। এ আইনের দশম ধারায় ট্রাস্টের দায়িত্ব ও কার্যাবলীতে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যসেবায় জনগণের অংশগ্রহণ ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকের আওতাভুক্ত এলাকাসমূতে জনগণের মাঝ থেকে মনোনীত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিউনিটি গ্রুপকে কার্যকর ও গতিশীলকরণসহ ট্রাস্ট ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল কার্যক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার নিশ্চিত করাও ট্রাস্টের অন্যতম দায়িত্ব।
কমিউনিটি ক্লিনিক প্রত্যন্ত গ্রামের নারীকে সন্তান প্রসবের জন্য তাৎক্ষণিক দক্ষ সেবা দিচ্ছে এবং এতে করে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পাচ্ছে। অদক্ষ দাইয়ের হাত দিয়ে সদ্যোজাত শিশুর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বেড়েছে। প্রচন্ড দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি সমস্যায় মানুষ এখন হাতের কাছের কমিউনিটি ক্লিনিকে ভরসা পাচ্ছে। এসব ক্লিনিকের পরামর্শ সেবাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাবার, গর্ভকালীন তথ্য, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পরামর্শ ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাস্থ্য কর্মীরা জনসচেতনতামূলক ভূমিকা পালন করছে।
স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা-উপজেলার হাসপাতালে যাওয়ার আগে ছোট-খাটো অসুখে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা গ্রহণ করুন। এখানেও যথাযথ চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে করে আপনার সময় ও অর্থ বেঁচে যাবে এবং দ্রুত চিকিৎসা লাভের সুযোগ হবে। নিজে নিজে কোন রোগের ওষুধ গ্রহণ না করে হাতের কাছে যে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে সেখানকার ডাক্তারের সাথে একবার পরামর্শ করুন। তাদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরী করুন, যাতে কোন বিপদে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবাটা পেতে পারেন। যে কোনো অসুখের তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা আপনাকে অসুখটার ক্রমবৃদ্ধি ঠেকাতে সহযোগিতা করবে। তারপর প্রয়োজন হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা-উপজেলায় যেতে পারেন। দুর্ঘটনায় আপনার কোন অঙ্গ কেটে গেছে। জেলা-উপজেলায় যেতে যেতে আপনার প্রচুর রক্তক্ষরণের সমস্যা বাড়তে পারে। আবার আপনার প্রেসার কমে বা বেড়ে গেছে আপনি বুঝতে পারছেন না। এ সময়ে কাছের ডাক্তারই আপনার পরম বন্ধু হতে পারে। এসব দিক বিবেচনায় কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মাঠপর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিককে জনবান্ধব করতে স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবায় প্রশিক্ষিত করতে হবে। চিকিৎসা উপকরণের সরবরাহ বজায় রাখতে হবে।
আমরা জানি, সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। একটি উন্নত জাতি গঠনে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জাতির কোন বিকল্প নেই। এ জন্য জবাবদিহিমূলক জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জনগণের অংশগ্রহণে গঠিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাই পারবে আগামীতে একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে। অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আসুন সবাই কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করি এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করি -পিআইডি প্রবন্ধ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!