॥মোক্তার হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নে ব্যাপক পুলিশী তৎপরতার মুখেও একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে।
আর এসব ঘটনার শেষ পরিণতি কী হবে এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হচ্ছে। পূর্ব দ্বন্দ্বের জের ধরে কিংবা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এসব হামলার ঘটনা ঘটছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, গতকাল ১৫ই মে কেওয়াগ্রামে পূর্ব দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় আলতাফ বিশ্বাস(৬০) ও তার পুত্র সজল বিশ্বাস(২৫) গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাসহ সাম্প্রতিক সময়ে কসবামাজাইল ইউনিয়নে কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
কেওয়াগ্রামের দরিদ্র পরিবারের আলতাফ বিশ্বাস ও তার ছেলে সজল বিশ্বাসের চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছে তাদের পরিবার। আলতাফ বিশ্বাস একজন কাঠ মিস্ত্রী এবং তার ছেলে সজল ওয়েলডিং মিস্ত্রি। কলিমহর বাজারে তার ওয়েলডিং দোকান আছে।
আহত আলতাফ বিশ্বাসের বড় ছেলে কামাল বিশ্বাস জানান, একই গ্রামের প্রতিপক্ষ ইউসুফ শেখের নেতৃত্বে ১৮/২০ জনের একটিদল বুধবার সকাল ৮টার দিকে হাতুড়ী, রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় তার পিতা আলতাফ বিশ্বাসের দুই পা এবং ছোট ভাই সজল বিশ্বাসের দুই পা, হাঁটু ও বাম হাতের কব্জিসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাদের পাংশা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কামাল বিশ্বাস অভিযোগ করে আরও বলেন, ইউসুফ শেখ গংদের সাথে তাদের সামাজিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। ইউসুফ শেখ গংদের বিরুদ্ধে পূর্বের একটি গোলযোগের ঘটনার মামলার বাদী আলতাফ বিশ্বাস। ওই মামলার আসামীরা মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন সময়ে চাপ দিয়ে আসছিল। গত মঙ্গলবার রাতেও মামলা তুলে নিতে হুমকী প্রদর্শন করে। বুধবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ীতে হামলা হালায়। প্রথমে হামলাকারীরা আলতাফ মিস্ত্রিকে মারধর করে। ভয়ে সজল বিশ্বাস বাড়ী থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী নাসিরের বাড়ীতে গিয়ে ওঠে। সেখানে ঘরের দরজা ভেঙ্গে সজল বিশ্বাসকে ঘর থেকে বের করে কুপিয়ে জখম করা হয়। আলতাফ মিস্ত্রী ও তার ছেলে সজল পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে তাদের পরিবার।
এদিকে, গতকাল ১৫ই মে সকালে কেওয়াগ্রামে গোলযোগের খবর পেয়ে কসবামাজাইল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি এসআই সেকেন্দার আলীর নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পুলিশের সহায়তার আহত আলতাফ মিস্ত্রি ও তার ছেলে সজল বিশ্বাসকে পাংশা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
হামলার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কসবামাজাইল ইউপির ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার গোলাম সরোয়ার ওরফে বেনা মেম্বার জানান, ইউসুফ শেখের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। আলতাফ মিস্ত্রি মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ার কারণে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
তিনি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, গত ইউপি নির্বাচনের পর কসবামাজাইল ইউপির বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বহু লোকজন একাধিক মামলার আসামী হয়েছেন। উভয় পক্ষের মামলার ভারে আসামীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে উপজেলা নির্বাচনের পর পুনরায় হামলার ঘটনা ঘটছে। আগামী ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে এমনিতর হামলা চলতে থাকলে শেষ পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
কসবামাজাইল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি এস.আই মোঃ সেকেন্দার আলী জানান, বুধবার সকালে গোলযোগের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে সুবর্ণকোলা গ্রামে হামলার শিকার হন কৃষক পরিবারের আলম বিশ্বাস(৪২)। সে পাংশা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর আগে একই গ্রামের হকাই জোয়ার্দ্দার ও আফসার জোয়ার্দ্দার দুই পরিবারের মধ্যে গোলযোগের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় হকাই জোয়ার্দ্দার বাদী হয়ে পাংশা থানায় মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলা তুলে নিতে বাদীকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। লক্ষèীপুর-মহতপাড়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার মাস্টারের বাড়ীসহ মোট চারটি বাড়ীতে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া নাদুরিয়া উত্তরপাড়া গ্রামেও পূর্ব দ্বদ্বের জের ধরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। তবে এ বিষয়ে স্থানীয় ভাবে মীমাংসা করা হয়।
পাংশা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আহসান উল্লাহ জানান, এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে পুলিশী জোর তৎপরতা চলছে। গতকাল বুধবার সকালে কেওয়াগ্রামে গোলযোগের ঘটনায় পাংশা মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার এজাহারনামীয় ইউসুফ ও মোস্ত নামের ২জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।