মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

সঠিক খাদ্যাভ্যাসে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৯

 শাহ্ মোস্তফা আনোয়ার  ফরিদ সাহেবের একমাত্র ছেলে শাহরিয়ার হোসেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পড়াশোনায় অনেক ভালো, কিন্তু হঠাৎ সে অমনোযোগী হয়ে উঠে। অলসতা, খাওয়ায় অরুচি, নানান সমস্যা এমনকি ঘুম থেকে উঠতেই চায় না সে। কারো সাথে ঠিকমতো কথা বলে না, ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর করে। ছেলের এই অবস্থা দেখে ফরিদ সাহেব ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার হাইপোথাইরয়েডিজম ধরা পড়ে। যার জন্য হাইপ্রেসার, কোলেস্টেরল, ক্রিয়েটিনিন বেড়ে আছে। ডাক্তার অভয় দিয়ে বললেন নিয়মিত ওষুধ খেলে এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শুধুমাত্র ফরিদ সাহেবের ছেলেরই এই সমস্যা নয়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ঘরেই থাইরয়েড এখন একটি সাধারণ রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আমাদের সকলেরই সহায়ক খাদ্য সম্পর্কে জানা জরুরী।
মানবদেহের যে সকল অঙ্গ থেকে হরমোন উৎপন্ন হয়ে সরাসরি রক্তে নিঃসৃত হয় তাদেরকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলে। থাইরয়েড গ্রন্থি একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। এর অবস্থান কণ্ঠনালীর গোড়ার দিকে গলার হাড়ের উপর। আকৃতি অনেকটা প্রজাপতির ন্যায়। থাইরয়েড গ্রন্থি হতে নিঃসৃত হয় থাইরক্সিন ও এন্টিথাইরক্সিন নামে দু’টি হরমোন। জরুরী অবস্থায় দেহে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাইরক্সিন হরমোন। যেমন ভয় পেলে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাওয়া, চোখ বিস্ফোরিত হওয়া ইত্যাদি আকস্মিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাইরক্সিন হরমোন। এন্টিথাইরক্সিন এর কাজ সম্পূর্ণ বিপরীত।
থাইরক্সিন এর পরিমিত নিঃসরণ যেমন জরুরী, ঘাটতি কিংবা আধিক্য শরীরের জন্য তেমনি ক্ষতিকর। থাইরয়েড গ্রন্থির জটিলতা বা এর অস্বাভাবিকতাকে সাধারণভাবে থাইরয়েডিজম বলা হয়। থাইরয়েডিজম দুই প্রকার হতে পারে। যথা-হাইপারথাইরয়েডিজম ও হাইপোথাইরয়েডিজম। প্রয়োজনের তুলনায় থাইরক্সিন হরমোন অধিক পরিমাণে নিঃসৃত হলে তাকে হাইপারথাইরয়েডিজম ও কম নিঃসৃত হলে তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। দু’টি সমস্যাই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। হাইপারথাইরয়েডিজমে উপসর্গসমূহ দেখা দিতে পারে, যেমন- অতিরিক্ত অস্থিরতা, কোনো কাজে মনযোগ দিতে না পারা, চক্ষু কোটরের বাইরের দিকে চলে আসা, অনিদ্রা, অতিরিক্ত ঘাম, সুক্ষ্মসুক্ষ্ম কাপুনি, ওজন কমে যাওয়া, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি। হাইপোথাইরয়েডিজমে উপসর্গসমূহ সম্পূর্ণ এর বিপরীত। উল্লেখ্য, ব্যক্তি বিশেষে উপসর্গগুলোর ভিন্নতা দেখা যেতে পারে। এছাড়া দেহে চাহিদার তুলনায় আয়োডিনের ঘাটতি থাকলে থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে যে অবস্থাকে সাধারণত গলগন্ড বা ঘ্যাগ রোগ বলা হয়। পরিমিত আয়োডিন সরবরাহে এ রোগ নিরাময়যোগ্য।
থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে কিছু কিছু খাবার পরিহার করা জরুরী। তাই ডায়েটে ডাল, বিনস, সবজি সবই রাখতে হবে- তবে পরিমিত। অতিরিক্ত ফাইবার আমাদের থাইরয়েডের সমস্যাকে আরও কমপ্লিকেটেড করে দিতে পারে। ‘ডায়েটারী গাইডলাইন্স ফর অ্যামেরিকানস-এর হিসাব অনুযায়ী পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে ২০-৩৫ গ্রাম ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। মিষ্টি, কেক বা মিষ্টি স্বাদযুক্ত যেকোন খাবারকে ডায়েট থেকে বাদ দেওয়াই ভালো। আমাদের কারো যদি থাইরয়েডের জটিলতা থাকে, তাহলে মিষ্টি খাওয়া অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। কারণ থাইরয়েড জটিলতা আমাদের শরীরের মেটাবলিজমকে শ্লথ করে দেয়। ফলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তাছাড়া মিষ্টি খাবারের বাড়তি ক্যালোরি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
থাইরয়েড থাকলে মিষ্টি বা চিনি একদম খাওয়া ঠিক না। আর কোল্ড ড্রিংকসে অধিক পরিমাণে চিনি থাকে, তা আমরা সকলেই জানি। এমনিতেই এই সফট ড্রিংকসগুলো খাওয়া একদম ভালো না। তাই থাইরয়েড থাকুক বা না থাকুক, কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার প্রবণতা দূর করা উচিত; কফিতে থাকা ক্যাফেইন থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট মেডিসিনের কাজে বাধা দেয়। তাই যাদের থাইরয়েডের সমস্যা আছে তাদের কফি এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ কফি অনেক সময় থাইরয়েডকে কন্ট্রোলের বাইরে নিয়ে গিয়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
সয়াবিন যতই প্রিয় হোক না কেন, থাইরয়েড জটিলতা থাকলে এটা খাওয়া বন্ধ করতে হবে। সয়াবিনে থাকা আইসোফ্ল্যাভিন থাইরয়েডের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হতে পারে। আর যদি রোজ ডায়েটে সয়াবিন রাখা হয় তাহলে থাইরয়েড জটিলতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। থাইরয়েড জটিলতা ধরা পড়লে পাউরুটি, পাস্তা, ভাত বা গ্রেন জাতীয় খাবার পরিহার করাই ভালো। কারণ এতে থাকা গ্লুটেন নামক প্রোটিন ক্ষুদ্রান্তে সমস্যার কারণ হতে পারে, যা থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট মেডিসিনের অ্যাবসর্ভে বাধা দেয়। তাছাড়া গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট থাইরয়েডকে খানিক নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। আর আপনার ডায়েটে যদি গ্লুটেন রাখতেই হয়, তাহলে চেষ্টা করবেন যেন হোল গ্রেন থাকে।
থাইরয়েড জটিলতা ধরা পড়লে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রুকলি, শালগম ইত্যাদি খাওয়া পরিহার করতে হবে-কারণ এগুলো থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের আয়োডিনকে ব্যবহার করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে শরীরে নানারকম সমস্যা হতে পারে; ঘরের খাবার ঘরেই তৈরি করা উচিত। প্রসেস করা খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকে, প্রিজারভেটিভ মানেই সোডিয়ামের আধিক্য। থাইরয়েড জটিলতার ক্ষেত্রে সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ একদম অনুচিত। বেশী সোডিয়াম খাওয়া মানেই হাই-ব্লাডপ্রেসার, যা আমাদের থাইরয়েডের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে; অতিরিক্ত মাত্রায় ফাস্ট ফুড, ফ্যাট বা ভাজা জিনিস খেলে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে হরমোন উৎপাদনের সমস্যা হয়। তাই প্রতিদিনের ডায়েট থেকে মাখন, মেয়োনিজ, তেলে ভাজা বার্গার বাদ দিয়ে দেওয়া ভালো। ফ্যাট জাতীয় খাবার শরীরে থাইরেয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট মেডিসিনের অ্যাবসর্ভে বাধা সৃষ্টি করে; সাবধান! অ্যালকোহল আমাদের শরীরে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের সামঞ্জস্যকে একদম নষ্ট করে দিতে পারে। শরীরে স্বাভাবিক থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনকেও ব্যাহত করে অ্যালকোহল। তাই অ্যালকোহলের নেশা প্রত্যেকের ত্যাগ করা দরকার।
থাইরয়েড জটিলতা একটি সাধারণ বিষয় এবং সঠিক চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাবে বেশীর ভাগ রোগী থাইরয়েড জটিলতায় ভুগছে। আরও একটি জরুরী বিষয় হলো গ্রাম-বাংলার এমনকি শহরের অনেক থাইরয়েড আক্রান্ত রোগীর পরিবার সনাতনধর্মী চিকিৎসার দ্বারস্থ হয়। ঝাড়-ফুঁক, কবিরাজী, ভেষজ নানাবিধ পরামর্শ আর চিকিৎসা নিয়ে রোগের প্রকটতা বাড়িয়ে দেয়-যা কাম্য হতে পারে না। দেশের সব জায়গায় এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতেও থাইরয়েডের বিশেষায়িত চিকিৎসা আছে। বিশেষায়িত ডাক্তারের পরামর্শে রোগীর সুস্থতা সম্ভব। তাই সঠিক চিকিৎসা এবং সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে থাইরয়েড জটিলতা অনেকাংশেই নির্মূল হবে। সুস্থ্য সুন্দর জাতি গঠনে থাইরয়েড জটিলতা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি সময়ের দাবী -পিআইডি প্রবন্ধ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!