Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

৭১’এ আহলাদীপুরের ঠাকুর পরিবারের নিহত ৬জনের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবী

॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ ‘ভাই ১৯৭১ সাল থেকেই বুকের ভিতরে কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি। চোখের সামনে বাবা-মা-ভাইসহ পরিবারের ৬জনকে নির্মমভাবে খুন হতে দেখেছি। হারিয়েছি জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় বাবা-মাকে। ছোটবেলা থেকেই এতিম হয়ে বড় হয়েছি। যে বয়সে বাবার হাত ধরে বড় হবার কথা ছিলো, সেই বয়সে বুকে চেপেছি আপন জন হারানোর বেদনা। আজ ২০১৬ সাল। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫টি বছর পার হয়ে গেলেও মেলেনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। এখন শুধু বাড়ীতে সেই ৬জনকে যেখানে গণকবর দেওয়া হয়েছিলো সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরীর দাবী জানাই।
জীবনের শেষ ইচ্ছে মরার আগে যেন স্মৃতিস্তম্ভটি দেখে যেতে পারি’-কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের আহলাদীপুর গ্রামের বাড়ৈপাড়ার ঠাকুর পরিবারের প্রবীর কুমার(৫৫)।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে নিমতলা গ্রামে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী যুবকদেরকে সংগঠিত করে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করছিলেন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও তৎকালীন নিমতলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালিপদ ঠাকুর। কিন্তু তার এই দেশপ্রেম দেখে ক্ষুব্ধ হয় তৎকালীন পিস কমিটির(শান্তি কমিটি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল্লাহ মিয়া। ১৯৭১ সালের ১১ই মে বেলা ১১টার দিকে মুক্তিকামী যুবকরা যখন কালিপদ ঠাকুরের বাড়ীতে দেশ রক্ষার চেষ্টায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলো ঠিক তখনই তাদের উপরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে পিস কমিটির সদস্যরা। একে একে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কালিপদ ঠাকুর, তার মা সরলা দেবী, স্ত্রী উষা রাণী, ছোট ছেলে প্রদ্যুৎ কুমার, বোন জামাই অনিল চৌধুরী ও অনিল চৌধুরীর ছেলে অবনী চৌধুরীকে। এ সময় জঙ্গলে লুকিয়ে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান প্রবীর কুমার। এদেরকে হত্যা করে পিস কমিটির সদস্যরা চলে গেলে মুক্তিকামী যুবক সাত্তার, ওহাব (যার নামে পরবর্তীতে শহীদ ওহাবপুর নামকরণ করা হয়), সোহরাব, কুটি খাঁ এগিয়ে এসে ৬টি নিথর মরদেহ উদ্ধার করে ঠাকুরের বাড়ীতে তৈরী করা মাটির নীচের একটি বাংকারের মধ্যে গণকবর দেয়।
সেই হত্যাকান্ডে প্রাণে বেঁচে যাওয়া প্রবীর কুমারের ছোট ভাই পঙ্কজ কুমার জানান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশ স্বাধীন হলেও কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেয়নি। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও ঠাকুর পরিবার পায়নি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। এখন অপেক্ষা কবে নির্মাণ হবে গণকবরের উপরে স্মৃতিস্তম্ভ।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোঃ আব্দুল জলিল জানান, শহীদওহাবপুরে মুক্তিযুদ্ধে নিহত ঠাকুর পরিবারের গণকবরের উপরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরীর জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। জমি নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি দ্রুত সেখানে শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরী করা হবে।