॥স্টাফ রিপোর্টার॥ যৌতুক দিতে না পারায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের আইভি খাতুন নামের এক গৃহবধূকে নির্যাতন করে পেটের সন্তান নষ্ট করে দিয়েছে তার লম্পট স্বামী।
এ ঘটনায় রাজবাড়ীর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা করেছেন আইভি। আদালতের নির্দেশে মামলাটি গত ৩১শে মার্চ রাজবাড়ী সদর থানায় রেকর্ড হয়েছে।
যৌতুক লোভী স্বামীর নাম আল আমিন। সে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার ব্যাসদী গ্রামের আয়নালের ছেলে। রাজবাড়ী থানার মামলা নং-৫১. ধারাঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধনী ০৩ এর ১১(খ) তৎসহ ৩২৩/৩১৩/৫০৬ পেনাল কোর্ড।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, আল আমিন তার পূর্বের আরও একটি বিয়ের কথা গোপন রেখে ২০১৮ সালের ২২শে জুন আইভিকে বিয়ে করে। এছাড়াও সে ছিল মাদকাসক্ত। বিয়ের পর থেকে আল আমিন আইভিকে তার বাবার বাড়ী থেকে জমি বিক্রি করে দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দেবার জন্য নির্যাতন শুরু করে। এর বেশ কিছুদিন পর আইভি গর্ভবতী হয়ে পড়লে তার ওপর আরো বেশি নির্যাতন চালিয়ে পেটের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতে বলে আল আমিন। এতে আইভি রাজী না হলে আল আমিন তাকে বাচ্চা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক কিছু লাল রংয়ের বড়ি খাওয়ায়। এতে আইভির শরীর অনেক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আইভির মা আল আমিনদের বাড়িতে গেলে আল আমিন তার কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে আইভিকে অসুস্থ্য অবস্থায় তার সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়। আইভি মায়ের বাড়িতে গিয়ে মায়ের কাছে লাল বড়ি খাওয়ানোর বিষয় খুলে বলে এবং আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এরপর আইভির মা আল আমিনকে খবর দিলে গত ২রা ডিসেম্বর আল আমিন ওই বাড়িতে যান। সেখানে আইভির মা আইভিকে সু-চিকিৎসা দিয়ে ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আল আমিনকে অনুরোধ করেন। এ সময় আল আমিন জানায় দুই লাখ টাকা পেলে তবেই সে আইভিকে ঘরে ফিরিয়ে নিবে, নাহলে সে আইভির পেটের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলবে। তখন আইভির মা ও আইভি যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে আল আমিন আইভির তলপেটে সজোরে বেশ কয়েকটি লাথি মারে এবং মারপিট করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। ওইদিন রাতে আইভি প্রচন্ড অসুস্থ্য হয়ে পড়েন ও তার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরদিন ৩রা ডিসেম্বর পরিবারের লোকজন আইভিকে অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন আইভির গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। পরে চিকিৎসকরা তার জীবন বাচানোর জন্য তার গর্ভপাত করান। গত ৩রা ডিসেম্বর থেকে ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আইভি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তিনি গত ৬ই জানুয়ারী রাজবাড়ীর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন। ট্রাইবুনালের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা রুজু পূর্বক থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্ত করে ষাট কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদনের নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে গত ৩১শে মার্চ মামলাটি রাজবাড়ী সদর থানায় রেকর্ড করা হয়। এ খবর লেখা পর্যন্ত আসামী গ্রেফতার হয়নি।