॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে গতকাল ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় শহরের লোকসেড বধ্যভূমিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বক্তব্য রাখেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম,পিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, পৌরসভা মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, জেলা জাসদের(ইনু) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ নিজাম মন্টু ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমিনুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামন খান, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোঃ আজম, জেল সুপার মোঃ আনোয়ারুল করিম, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মরণ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর বাহিনী অসংখ্য মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। রাজবাড়ীতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তখন রাজবাড়ীতে যেসব বিহারী ও রাজাকাররা বাস করতো তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে মানষকে ধরে এনে লোকসেডের এই বদ্ধভূমিতে হত্যা করতো। অথচ যারা এই হত্যাকান্ড চালাতো তারাও মুসলমান, আবার যাদের হত্যা করা হতো তারাও মুসলমান ছিল। এখনও তাদের জাত ভাই অনেকে আছে যারা বাংলাদেশে বসবাস করে, বাংলাদেশের খেয়ে পাকিস্তান পাকিস্তান করে। তাদের এদেশে থাকার কোন অধিকার নাই। কারণ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানীর বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ সেই স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের জিডিপিসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে আমারা আমাদের শোষক গোষ্ঠী পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে। সেদিন আর বেশী দূরে নয় যেদিন আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট শাহাদতবরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ, জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতা, ২৫ই মার্চের ভয়াল কালো রাতে গণহত্যার শিকার হওয়া সকল শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো ২ লক্ষ মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ২৫শে মার্চ পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী রাতের অন্ধকারে নিরীহ বাঙালীর উপর অপারেশন সার্চলাইটের নামে যে গণহত্যা চালিয়েছিল সেটি বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম নৃশংস একটি গণহত্যা। সেই কালো রাতে ইপিআর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালীদের হত্যা করেছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল ইসলামের গোপনে তোলা সেই হত্যাকান্ডের একমাত্র ভিডিওটি প্রামাণিক দলিল হিসেবে ঢাকারর মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। রাজবাড়ী রেলসমৃদ্ধ শহর হওয়ায় ও কোলকাতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারণে অনেক বিহারী রেলে চাকুরীর সুবাদে রাজবাড়ী বাসবাস করতো। তারাই মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই রাজবাড়ী লোকসেডের এই হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করেছিল। তাদের ধারণা ছিল বাংলাদেশ কখনও স্বাধীন হবে না। তারা সকল অপকর্ম থেকে পার পেয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যারা হত্যাকান্ড ও নারী ধর্ষণসহ মারাত্মক অপরাধের সাথে মুক্তিযুদ্ধের সময় জড়িত ছিল তাদের ক্ষমা করেননি। তিনি যখন তাদের বিচার শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনই তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার হত্যার পরবর্তী ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিরোধীতা করেছিল তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তাদের বিচার করেন, যা এখনও চলমান আছে। আজ তার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের আজ তিনি সম্মানিত করেছেন। নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। দেশকে তিনি আজ উন্নয়নের পথে নিয়ে গেছেন। হয়তো আমরা তার সঠিক দিকনির্দেশনায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।
আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে বদ্ধভূমিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বালনের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করা হয়। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।