২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস- বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস¥রণীয় ও গৌরবোজ্জ্বল দিন। এটি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন, পরাধীনতার শিকল ভাঙার দিন। এ দিনে ২৫ মার্চের কালো রাতের বিভীষিকার ধ্বংসস্তুপ থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বাঙালি জাতি গর্জে উঠেছিল চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে।
ঐতিহাসিক এ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স¥রণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে; যাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তি পাগল বাংলার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য। সশ্রদ্ধ চিত্তে স¥রণ করি স¦াধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ নির্যাতিত মা-বোনকে; যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। সশ্রদ্ধ সালাম জানাই সেই সব অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী জনতার প্রতি, যারা দেশমাতৃকার জন্য বুক চিতিয়ে লড়েছেন এবং বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলার মাটিকে হানাদারমুক্ত করেছেন। যারা স্বজন হারিয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। আজকের দিনে রাজবাড়ী জেলার সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জানাচ্ছি বিশেষ শ্রদ্ধা- শত সহস্র অভিবাদন।
অনেক রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করতে হবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিতে হবে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার। সে লক্ষ্য অর্জনে সবাই নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষি, শিক্ষা, স¦াস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বাণিজ্য, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, নারীর ক্ষমতায়ন, যুব ও ক্রীড়া, মহিলা ও শিশু ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদের সফল অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ায় বাংলাদেশের সম্মান আরও বেড়েছে। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব সভায় স¦ীকৃত। দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র, কর্মহীনতা, দুর্যোগের রক্তচক্ষুকে পদদলিত করে অতুলনীয় এই অর্জন বিশ্ববাসীর নিকট এক বিস্ময়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে দুর্র্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে সময় এসেছে দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে আত্মত্যাগের বহ্নিশিখায় অসাম্প্রদায়িক ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২০২১ সালে মুজিব বর্ষ এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদযাপন করবো। বাঙালি জাতির এই দুই মাহেন্দ্রক্ষণে সরকার দেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। আর এরই কৌশল হিসেবে সরকার ভিশন ২০২১ তথা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ভিশন ২০৪১ তথা ২০৪১ সালের মধ্যে আধুনিক ও উন্নত দেশে পরিণত করার রূপকল্প বাস্তবায়ন করছে।
বাঙালি জাতির এই দুই মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে সরকার ঘোষিত ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে আমাদের বিপুল মানবসম্পদ ও তথ্য প্রযুক্তির সার্থক ব্যবহারের মাধ্যমে আসুন আমরা সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখি। সকলের সমি¥লিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করাই হোক মহান স¦াধীনতা ও জাতীয় দিবসের অঙ্গীকার।
(মোঃ শওকত আলী)
জেলা প্রশাসক
রাজবাড়ী।