মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৬ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সাম্প্রতিক হালচাল

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯

##মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান## আমাদের জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম মূলভিত্তি প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ অর্থাৎ রেমিট্যান্স। দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রামের পরতে পরতেই রয়েছে তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সের ঘর্মাক্ত ছাপ। প্রবাসীদের ঘামের বিনিময়ে বাড়ছে দেশের রিজার্ভ। তারা সচল রাখছে অর্থনীতির চাকা। বিদেশে প্রতিনিয়ত নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে সারা বিশ্বে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে দেশের স্বার্থে। তারা একদিকে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে, অপরদিকে দেশে রেখে যাওয়া পরিবারের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। যা প্রকারান্তরে দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখে।
বহুজাতিক সংস্কৃতির মেলবন্ধনে জীবিকার তাগিদে বাঙালী খাদ্য, ভাষা সমস্যাকে জয় করে প্রবাসে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। কারণ বাঙালী হারতে জানে না। বাঙালীর শ্রমসাধনা আর তীক্ষ্ম মেধায় অবাক হয় বিশ্ব। দেশ-বিদেশে রচিত হয় অসংখ্য সাফল্যগাঁথা। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিশ্বে বেশী কর্মী প্রেরণ করছে। বিশ্বের প্রায় ১৬৮টি দেশে ১ কোটি ২০ লাখ কর্মী কাজ করছে। আবার দেশে দেশে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত, সম্প্রসারিত হচ্ছে বৈদেশিক শ্রমবাজার। প্রবাসী কর্মীর খুশির বার্তা ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশময়। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান দেশে রেখে বিদেশ বিভূঁইয়ে তারা কতটা ভালো থাকেন তা আমরা দেশে অবস্থান করে সেভাবে অনুমান করতে পারি না। তবে তাদেরকে সবসময় শ্রদ্ধার আসনেই রাখি।
সৌদি পতাকাকে সম্মান জানানোয় এক বাঙালীকে পুরস্কৃত করেছে সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলীয় একজন মেয়র। প্রচন্ড ঝড়ে দাম্মামে সৌদি আরবের পতাকা নীচে পড়ে গেলে বাংলাদেশী এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ ফেলে ছুটে গিয়ে পতাকাটি কাঁধে জড়িয়ে নেয়। দৃশ্যটি এক সৌদি নাগরিক ছবি তুলে পোস্ট করলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তাকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেন সৌদি পশ্চিমাঞ্চলীয় মেয়র। এ নিয়ে জনপ্রিয় দৈনিক সৌদি গেজেটে বাংলাদেশী কর্মীদের সততা ও দক্ষতার প্রশংসা করে তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবী করা হয়। কারণ তারা বুকের রক্ত দিয়ে সবুজ জমিনে লাল বৃত্তের পতাকা অর্জন করেছে। মালয়েশিয়ায় বড় অংকের মুদ্রা কুড়িয়ে পেয়েও তা সততার সাথে কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী এক শ্রমিক।
ইউরোপের দেশ ফিজিতে হতে পারে বাংলাদেশের কর্মীদের সম্ভাবনাময় শ্রম বাজার। দেশটিতে নির্মাণ শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে। থাকা, খাওয়া ও ভালো বেতনসহ দেশটির অনুকূল আবহাওয়া বাংলাদেশীদের জন্য সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ফিজি ঘুরে এসেছে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইরাকে বিদেশী কোম্পানীর বড় প্রকল্পগুলোতে এবং বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে লক্ষাধিক কর্মী নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য অত্যন্ত খুশির। কর্মী ঘাটতির কারণে জার্মানি ইমিগ্রেশন রুলস সহজ করেছে। আবার পোল্যান্ড বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। সেদিক থেকে জনশক্তি রপ্তানীর সুখবর আসতে পারে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আমাদের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ৬ বছর নতুন কর্মী নিয়োগ ও ট্রান্সফার বন্ধ থাকার পর আরব আমিরাত সরকারের তিন মাস সাধারণ ক্ষমার ঘোষণায় হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দুবাইয়ে অবস্থানরত অবৈধ প্রায় ৩৯ হাজার বাংলাদেশী কর্মীর পাসপোর্ট নতুন করে ইস্যু করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করতে গত ৩১শে অক্টোবর হয়ে গেল বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিং। আলোচনা সফল ও সন্তোষজনক পর্যায়ের। বাংলাদেশী কর্মীরা সহজতর উপায়ে অল্প খরচে এবং দ্রুততম সময়ে যেন মালয়েশিয়ায় গমন করতে পারে সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কর্মী হিসেবে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ-সুবিধা এখন সহজতর এবং দ্রুততর করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সেবাদানকারী সব প্রতিষ্ঠান। সরকার প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছে। সেখান থেকে ভাষা জ্ঞান ও বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি দক্ষতা অর্জন করে বিদেশে কাজের সুযোগ থাকছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ৬টি মেরিন টেকনোলোজী ইনস্টিটিউট। দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন এবং রেমিট্যান্স আনয়নে বিদেশ গমনেচ্ছুদের প্রশিক্ষণ আবশ্যক। গত নভেম্বরে ঢাকার মিরপুরে কারিগরি শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। বলা হয়েছে, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রবাসীদের সন্তানরা ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পাবে।
প্রবাসীদের টাকা করমুক্ত রাখতে এনবিআর এর পক্ষ থেকে তাদের টিআইএন নম্বর করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশে প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য তিনটি বন্ড চালু আছে। চলতি বছরে প্রবাসীরা তিনটি বন্ডে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। সকল প্রবাসীকে বীমার আওতায় আনতে প্রবাসী কর্মী বীমা নীতিমালা চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে এটা আইডিআরএ-তে আছে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকটি তফসিলি ব্যাংকের তালিকাভূক্ত হয়েছে।
প্রবাসীদের কল্যাণে ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড থেকে আইনগত সহায়তা, প্রবাসীর সন্তানদের জন্য বৃত্তি সুবিধা, দুর্দশাগ্রস্তদের সহায়তা, বিদেশি নিয়োগদাতার কাছ থেকে মৃত প্রবাসী কর্মীর জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়, প্রবাসী কর্মীর লাশ ফেরত আনা, মৃত কর্মীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার মত সুবিধাদি প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক উদ্যোগে প্রবাসীদের সন্তানদেরকে বাংলাদেশী পদ্ধতিতে লেখাপড়া করানোর জন্য ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধ্যপ্রাচ্যে স্কুল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সৌদি আরবে ও বাহরাইনে ৪টি স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে। আর জর্ডান, লেবানন, ইরাক, বাহরাইন, ব্রুনাইয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য ১৫০ কোটি টাকার চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ পর্যায়ের ফল ও সবজির বাজার আল আভিরের শতকরা ৭৫ ভাগ ব্যবসায়ী বাংলাদেশী। রেমিট্যান্স বাংলাদেশের জিডিপির ১২ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে ডলারের উচ্চমূল্য এবং হুন্ডি ঠেকাতে সরকারের নানা উদ্যোগের কারণেই এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬ লক্ষ ১৫ হাজার কর্মী বিভিন্ন দেশে গমন করেছে এবং প্রবাসী আয় ১৩,১১৬.৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের সুগঠিত রিজার্ভ অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি এই রেমিট্যান্স। বিভিন্ন দেশ থেকে শুধু অক্টোবর মাসেই পাঠিয়েছে ১২৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার। বৈধ চ্যানেলের তুলনায় অবৈধ চ্যানেলে ডলারের বিনিময় হার বেশী থাকায় কাঙ্খিত রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসছে না। তাই রপ্তানীর মতো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ধারিত হারে প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে পত্র দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
দেশের কথা মাথায় রেখে প্রবাসীরা নানা কষ্ট করে দেশের উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রাখছেন। তাই বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো এবং বিদেশে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ বিশ্বপরিমন্ডলে অনন্য মাত্রায় উন্নীত হবে এবং লাভবান হবে। আর বিদেশ গমনেচ্ছুদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চাকুরীর নিশ্চয়তা নিয়ে যাওয়াটাও জরুরী -পিআইডি প্রবন্ধ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!