মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৮ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ভাবনা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯

# শায়লা তাবাসসুম নেওয়াজ # রেসিস্ট কত প্রকার? মানে এই দুনিয়াতে কত রকমের রেসিজম আছে? জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সর্বোপরি জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন। হতাশ হই। হতাশার ঠ্যালায় বলতে পারিনা প্রাউড টু বি এ উইমেন। আপনারা হয়তো অনেক উন্নত সমাজে থাকেন তাই আপনারা সগর্বে বলতে পারেন ‘ প্রাউড টু বি এ উইমেন।’
আজকের ঘটনা ঃ ১। দেশের শ্রেষ্ঠ পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী একজন মহিলা যিনি কিনা কলেজ শিক্ষকতায় আছেন তিনি যখন বলেন এই পোস্টে মহিলা নিলো কেন? পুরুষ পাইলো না? বিশ^াস করেন, আমি চমকে উঠি আর হতাশ হই। এ কার প্রতিনিধি, কাদের কণ্ঠের, কাদের চিন্তার প্রতিধ্বনি এই নারীর কন্ঠে? না ইনি তো গ্রামের লেখাপড়া না জানা অশিক্ষিত, অসচেতন মহিলা নন। তবে কেন ইনিও এত প্রবলভাবে পুরুষতান্ত্রিকতার ধারক-বাহক? যুগ যুগ ধরে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে বীজ বপন করেছে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী তাদের সুবিধার্থে, চাপিয়ে দিয়েছে আইনের, নিয়মের, সংস্কারের শৃঙ্খল, যতটুকু তাদের পক্ষে যায়, উদ্দেশ্য মূলকভাবে শুধু ততটুকুই প্রচার করা, কখনও কখনও ভয় দেখিয়ে স্বার্থসিদ্ধির প্রয়াস, আমরা শিক্ষিত, অশিক্ষিত সর্বোপরি বেশিরভাগ নারীরা অসচেতন বা সচেতনভাবে তার ধারক-বাহক। তাই নারী হয়েও তার কণ্ঠে পুরুষের চিন্তার প্রকাশ।
আজকের ঘটনা ঃ ২। যাকে কিছুটা যুক্তিবাদী, উদার পুরুষ হিসাবে জানি আমরা অনেকেই, তার মুখের কথা এই পদে মহিলা নিলো কেন? পুরুষ ছিল না? যেন জগতের তামাম মহিলা মেধাহীন, চেহারা দেখিয়ে না হয় দয়া-দাক্ষিণ্যে না হয় অন্য কোন উপায়ে মহিলারা বড় বড় বা ছোট ছোট পদ পায়। যেন জগতের তামাম পুরুষ মেধাবী। সব নারীই তাদের চোখে অযোগ্য। হাজারটা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন শুধুমাত্র মহিলা হওয়ার কারণে তার যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় সেই পুরুষের দ্বারা যে কিনা তার চেয়ে অনেক কম মেধাবী। অনেক কম যোগ্যতা সম্পন্ন। নারীর মেধা, নারীর যোগ্যতা স্বীকার করে নিতে তাদের সমস্যা ঠিক কোন জায়গায়? ইনসিকিউরিটিতে ভোগে? নারী বেশি মেধাবী, বেশি বোঝা, বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন হলে পুরুষদের কর্তৃত্ব কমে যাবে? তাই তাকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে এত হীনমান্যতা রোজই যেখানে শুনতে হয়। নারীরা হলো পুরুষের অধীনস্ত, নারীদেরকে তিন ভাগের এক ভাগ মেধা দিয়ে তৈরী করা হয়েছে সেখানে এই দুইটা ঘটনা আর কি এমন! এ তো গা সওয়া হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যারা খারাপ মেয়ে এই সমাজের এঁটে দেওয়া তকমায় তারা একটু-আধটু প্রতিবাদ করে। তারা নারীবাদী/ফেমিনিস্ট হাশট্যাগ খায়। নারীবাদী তো গালিতে পরিণত হয়েছে আজকাল। গায়ে লাগলো যথারীতি আজকের ঘটনা দুইটা। কাল আন্তর্জাতিক নারী দিবস বলেই হয়তো। কাল কত র‌্যালী হবে, মিছিল-মিটিং হবে, কত নারী কত পুরুষ, যারা মিছিল মিটিং র‌্যালী করবে তাদেরকে নারীবাদী/ফেমিনিস্ট বলে টিটকারী দেবে। কত নারী, নারীদের সংজ্ঞা না জেনে, নারী দিবসের প্রেক্ষাপট এবং প্রয়োজনীয়তা না জেনে বাঁকা মন্তব্য করবে। নারীবাদ আর মানবতাবাদের মধ্যে যে কোন পার্থক্য নাই তা যতদিন না এদেশের প্রতিটা নারী বুঝবে ততদিন তারা বলবে আমি ফেমিনিস্ট নয়। যেদিন নারী পুরুষের সমতা ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন নারীদের শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে কাজের জায়গায়, রাস্তা-ঘাটে, বাড়ীতে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে প্রতিনিয়ত অগ্নি পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে না। শুনতে হবে না কোন বাঁকা কথা, দেখতে হবে না আর বাঁকা চাহনী। সেদিন আর নারী দিবসের প্রয়োজন হবে না আলাদা করে। পুরুষতান্ত্রিকতার ধারক-বাহক নারীরা আর মানবতাবাদের মধ্যে কোন পার্থক্য আদতে নেই, যতদিন না আপনারা এ কথা বুঝতে পারবেন ততদিন নারী দিবস থাকবে, নারীবাদ থাকবে।
আমি যে সমাজে চলি, যে দেশে থাকি সেই সমাজ নারী বান্ধব সমাজ নয়। প্রতিদিন হাজারটা প্রতিবন্ধকতা, বাঁকা কথা আর কাঁটা সরিয়েই আমাদের পথ চলতে হয়। আমি যে পথে চলি এ পথে তেমন মানুষ কই যারা বিশ^াস করে অন্তরে লালন করে-
‘বিশে^ যা কিছু মহান চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে-নারী অর্ধেক তার নর’।
তবুও আশা রাখি, একদিন আসবেই যখন কোন নারী, কোন মানুষ রেসিজমের শিকার হবে না। জেন্ডার ইকুয়িলিটিও হয়তোবা আসবে। তখন কোন নারীর বুক থেকে দীর্ঘঃশ^াস হয়ে এ কথা বের হবে না-
‘আমি তোমার মাটির কন্যা জননী বসুন্ধরা, তবু আমার মানব জনম কেন বঞ্চিত করা’।
যতদিন না হচ্ছে ততদিন পায়ের নিচে টুল অথবা মই হিসাবে নারী দিবস তো থাকছেই। আর থাকছে আমাদের বলতে না পারা-‘প্রাউড টু বি এ উইমেন।’ যারা বলতে পারছেন প্রাউড টু বি এ উইমেন তারা ভাগ্যবান। কিন্তু এই জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশনের সমাজে আমি এ কথা বলতে পারি না, বিশ^াস করেন এই সমাজে, এই দেশে এই পৃথিবীতে প্রাউড টু বি এ উইমেন এর আমি খ্যাতা পুরি। তবুও, তবুও আশা রাখি কোন একদিন হয়তোবা কোন একদিন আমাদেরকেই আনবে হবে পরিবর্তন। কারণ সমাজ একা একা পরিবর্তন হয়ে যায় না। আমি, আপনি, আমরাই একে পরিবর্তন করতে পারি- কেবল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর মানসিকতা দিয়ে, আর তার শুরু পরিবার থেকেই। যারা সহযোদ্ধা, সমমনা, নারী-পুরুষের সমতায় বিশ^াসী এমন সবাইকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা। (লেখিকা ঃ সদস্য, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রাজবাড়ী জেলা শাখা)।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!