॥রবিউল ইসলাম॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ২৫শে ডিসেম্বর বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও নির্বাচনী এজেন্টদের সমন্বয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সানোয়ার হোসেন, রাজবাড়ী-১ আসনের বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম ও তার এজেন্ট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এডঃ আসাদুজ্জামান লাল, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী কেরামত আলীর পক্ষে তার নির্বাচনী এজেন্ট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর এজেন্ট, রাজবাড়ী-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ জিল্লুল হাকিমের পক্ষে তার এজেন্ট পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম শফিকুল মোর্শেদ আরুজ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এডঃ এবিএম নূরুল ইসলামের পক্ষে তার এজেন্ট মোঃ আনিসুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নূর মোহাম্মদ মিয়া ও সাংষ্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী নাজমুল হাসান সভায় উপস্থিত ছিলেন। তবে সভায় রাজবাড়ী-২ আসনের বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাসিরুল হক বা তার এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন না।
সভায় রাজবাড়ী-১ আসনের বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম তার বক্তব্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, রাজবাড়ী একসময় রাজনৈতিক সম্প্রীতির জন্য খ্যাত ছিল, তা এখন আর নেই। বর্তমানে এখানে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। কোথাও পোস্টার-ব্যানার টানানো ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে দেয়া হচ্ছে না। গণসংযোগে বের হতে পারছি না। আমাকে কোন নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। আমার নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রচারণার শুরুতেই ১১ই ডিসেম্বর আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। গত ২৪শে ডিসেম্বরও পূর্ব নির্ধারিত গণসংযোগে বের হতে পারিনি। অথচ প্রশাসনকে আগে থেকেই অবহিত করে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। আমি বিভিন্ন সময় ডিসি সাহেবের সঙ্গে, এসপি সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি, ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। এখানে বিন্দুমাত্র নির্বাচনের পরিবেশ নাই। আমি নির্বাচনে থাকব কি না সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছি।
বক্তব্য দিয়েই তিনি সভা ত্যাগ করেন। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মোঃ শওকত আলী তাকে বার বার সভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকার অনুরোধ করলেও সভাস্থল ত্যাগ করেন।
এরপর আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী কেরামত আলীর এজেন্ট কাজী ইরাদত আলী বলেন, নির্বাাচন নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। আমরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছি। এমন পরিবশে থাকলে ৩০শে তারিখের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাজী ইরাদত আলী বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদেরকে কোন রকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না। রাজবাড়ীবাসী জানে বিএনপির মধ্যে দু’টি গ্রুাপ আছে। মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের নিজেদের মধ্যেই অনেক সমস্যা রয়েছে। তাদের দলীয় কোন্দলের কারণে যদি কোন ঘটনা ঘটে সে দায় তো আর আওয়ামী লীগের নয়।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মোঃ শকত আলী বলেন, বিএনপির প্রার্থী তার অভিযোগ শুনিয়েই চলে গেলেন। আমাদের কথা বলার সুযোগ দিলেন না। সত্যিকার অর্থে আমি চেষ্টা করছি সব দিক থেকে সকল প্রার্থীকে সমান অধিকার দিতে। আমার পক্ষ থেকে তাকে কোন অসহযোগিতা করা হয়নি। গত ১১ই ডিসেম্বর তার সভায় যে ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে তিনি আমাকে ফোনে জানানোর সাথে সাথে আমি পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। পুলিশ সাথে সাথে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সভায় পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা বলেন, পুলিশ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। গত ১১ই ডিসেম্বর বিএনপির সভায় হামলাকারীদের সনাক্তে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পুলিশ অপরাধী ও যাদের নামে মামলা আছে সে সকল আসামীদেরই গ্রেফতার করছে।
সমাপনী বক্তব্যে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী আগামী ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সকল প্রার্থীদের আচরণ বিধি মেনে চলার আহবান জানান।