॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পয়েন্টে ২য় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সমীক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এলে ১ম পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলেই প্রয়োজনীয়তা বুঝে ২য় পদ্মা সেতু এই সেতু নির্মাণে করা হবে।
গতকাল ১৩ই ডিসেম্বর দুপুরে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া বাসষ্ট্যান্ডে আয়োজিত বিশাল নির্বাচনী পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
পথসভায় আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা বলেন, এই বিজয়ের মাসে আজ আমি আপনাদের সামনে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনকের প্রাণপ্রিয় ও স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। আগামী ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আমি আপনাদের সকলের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট চাই। আপনাদের সকলের জানা স্বাধীনতার পূর্বে বাংলাদেশ ছিল একটি দেশের একটি প্রদেশ মাত্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন ও পরিবারের সকল সুখ-স্বাচ্ছন্দকে বিসর্জন দিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে সেই প্রদেশকে রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তার জন্যই আজকে আমরা স্বাধীন দেশে বাস করতে পারছি। এজন্য আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে, সেই সাথে জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং ৭৫’র ১৫ই আগস্ট আমার পরিবারের সকল সদস্যসহ যারা প্রাণ দিয়েছিলেন সেই সকল শহীদকে। সেই ১৫ই আগস্টে আমি আর আমার বোন শেখ রেহেনা বেঁচে গিয়েছিলাম বিদেশে থাকার কারণে। তারপরেও সেই স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক চক্র আমাকে মেরে ফেলার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মহান আল্লাহ্র অশেষ রহমতে ও এদেশের মানুষের দোয়া আর ভালোবাসার কারণে আজও আমি বেঁচে আছি। বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা ছিল মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে এদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা। বিশ্বের বুকে উন্নত ও সমৃদ্ধশীল একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু ঘাতকরা তাকে সেই সময় দেয়নি।
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর ৫বছরে সকল সেক্টরে অনেক উন্নয়ন করেছিলাম। এরপর ২০০১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় এসে সেই সকল অর্জন ব্যর্থ করে হরিলুটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। বিএনপি-জামাত জোটের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে তাদের সময়ে দেশ পর পর পাঁচ বছর দুর্নীতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ, বিদেশে অর্থ পাচার, অস্ত্র ব্যবসা, বোমা ও গ্রেনেড হামাল, সর্বক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারীতা ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের সাথে আঁতাতের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তাদের এই নৈরাজ্যের কারণে তারা দেশের মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ২০০৮ সালে নির্বাচনে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে আমরা আবার সরকার গঠন করি। সরকার গঠনের পর আবার প্রথম থেকে শুরু হয় উন্নয়ন। এরপর আমরা আবার ২০১৪ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর এই ১০ বছরে দেশকে বিশ্বের বুকে একটি রোল মডেল রাষ্ট্রে পরিণত করি। এই সময়ে বাংলাদেশ খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, বিদেশী বিনিয়োগ, পণ্য রপ্তানী, সমাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। দেশকে ডিজিটাল দেশে পরিণত করার মাধ্যমে আজকে সকল সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দেশের এমন মানুষ খুব কমই আছে, যারা মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা ভোগ করছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশ কৃষি নির্ভর। সেই বিষয়টি চিন্তা করে দেশের কৃষকদের উন্নয়নে সার-বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ কৃষিতে ভর্তুকী প্রদান করছি। যাতে কৃষকরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আরো বেশী কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে পারে। তাদের সঞ্চয় ও অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে এই সব কৃষকদের সারের জন্য নিজেদের জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে কৃষকরা ছিল নির্যাতিত ও নিপীড়িত। আজ বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যপুস্তক হাতে পাওয়ায় লেখাপড়ায় আরো মানোযোগী হয়েছে। তাদের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য তাদেরকে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। বয়ষ্ক, বিধাবা, প্রতিবন্ধীসহ সব ধরণের অসহায় মানুষকে তাদের ভাতা প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে সহায়তা করা হচ্ছে। দেশ আজ বিদ্যুতেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আজ দেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ভকেশনালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরী করা হচ্ছে। যার ফলে আজ বেকার যুবকদের দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে দেশের সর্বক্ষেত্রে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে আপনাদের অবশ্যই নৌকায় মার্কায় ভোট দিতে হবে। আমি মনে করি আপনারা অবশ্যই নৌকায় ভোট দিয়ে আমার মনোনীত প্রার্থী রাজবাড়ী-১ আসনের কাজী কেরামত আলী ও রাজবাড়ী-২ আসনের মোঃ জিল্লুল হাকিমকে নির্বাচিত করবেন। এ সময় শেখ হাসিনা উপস্থিত জনতার সামনে কাজী কেরামত আলী ও মোঃ জিল্লুল হাকিমকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চান।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা ও পাটুরিয়া- দৌলতদিয়ায় ২য় পদ্মা সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পর্কে আলোকপাত করে আরো বলেন, যদি রাজবাড়ীবাসী আবার তাদের ভোট প্রদানের মাধ্যমে নৌকার প্রার্থীদেরকে জয়লাভ করায় এবং আওয়ামী লীগ যদি আবার সরকার গঠন করে তাহলে আপনাদের সকল দাবী-দাওয়াগুলো অবশ্যই পূরণ করা হবে। আপনারা জানেন ১ম পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর সময় বিশ্বব্যাংক কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আমাদেরকে টাকা দেয়নি। আমরা বিশ্ব ব্যাংকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নিজেদের টাকায় সেই সেতু তৈরী করছি। সেটা শেষ হলেই দ্বিতীয়টা করবো। এ জন্য আমি ইতিমধ্যে সমীক্ষার(২য় পদ্মা সেতুর) কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ প্রদান করেছি। বর্তমান সরকার কেমন উন্নয়ন করে তা আপনারা বিগত সময়ে নিজ চোখেই দেখেছেন। তাই আপনারা যদি নৌকা প্রতীকে ভোট দেন তবে অব্যশই সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম, রাজবাড়ী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এমপি, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, চিত্রনায়ক রিয়াজ ও ফেরদৌস, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান ও সাইফুল ইসলাম সোহাগ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব নূরুজ্জামান মিয়া, সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নূরুল ইসলাম, গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মন্ডল ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ রাজীব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মোজাম্মেল হক এমপি, আহম্মেদ হোসেন ও বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার এবং গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডলসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।