॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি রাজবাড়ী জেলার একমাত্র সরকারী হাঁস-মুরগীর খামারে। সংস্কারের অভাবে খামারটির অধিকাংশ স্থাপনা এখন ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অযতœ আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার সরকারী সম্পদ। ব্যাহত হচ্ছে প্রাণি সম্পদের বিস্তার।
রাজবাড়ীতে হাঁস-মুরগীর পালন বৃদ্ধি ও বেকারত্ব ঘুচাতে ১৯৮২ সালে সরকারীভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় সরকারী হাঁস-মুরগীর খামার। প্রতিষ্ঠার ৩৫বছরে একটি বারের জন্যেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি খামারে। শহরের ভবানীপুরে ৩ একর জমিতে স্থাপিত খামারের অবকাঠামোগুলো পড়ে রয়েছে অযতœ আর অবহেলায়। তদারকির অভাবে নষ্ট হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার সরকারী সম্পদ।
খামারের বায়োসিকিউরিটি, বৈদ্যুতিক, পানি, মুরগীর শেড, বাচ্চা প্রাপ্তি, জনবল সংকটসহ ব্যবস্থাপকের বাসভবন(দীর্ঘ দিন ধরে পরিত্যক্ত), খাদ্য গুদাম(ঝুঁকিপূর্ণ), পরিত্যক্ত রেস্ট হাউজসহ বেশির ভাগ স্থাপনাই এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ৪টি মুরগীর শেডের মধ্যে ২টি বাতিল এবং যে ২টি চলছে সে দুটিও মেরামতযোগ্য হয়ে পড়েছে। দ্রুত খামারের অবকাঠামোর সংস্কার না হলে রয়েছে দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।
সরকারী হাঁস-মুরগী খামারের পিডিও মোঃ শাহাদৎ হোসেন জানান, সরকারী এই হাঁস মুরগীর খামারটি ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। খামারটি ৩ একর জমির উপরে অবস্থিত। খামারে ৪টি মুরগীর শেড আছে যার মধ্যে ২টি শেড বেশ কিছু দিন ধরে অকেজো হয়ে আছে। নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে মুরগী পালন হচ্ছে। একটি প্রশাসনিক ভবন, ৪টি মুরগীর শেড, একটি ৩য় শ্রেণী ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কোয়ার্টার, ম্যানেজারের বাসভবন ও একটি বিক্রয় কেন্দ্র, একটি গুদাম ঘর খামারে আছে। ৩য় শ্রেণী ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কোয়ার্টার, ম্যানেজারের বাসভবনটি পরিত্যাক্ত। মুরগীর শেডগুলোও মেরামত যোগ্য হয়ে পড়েছে। গুদাম ঘরটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অতি দ্রুত মেরামত না হলে যে কোন সময়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। খামারটির অব্যবস্থাপনা ও মুরগীর বাচ্চা বিতরণে ঘাটতি থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলার মুরগী খামারীরা। সরকারীভাবে মুরগীর বাচ্চা সরবরাহ পেলে ব্যক্তি পর্যায়ের খামারীরা লাভবান হতো অনেকাংশে।
ব্যক্তি মালিকানাধীন রাজবাড়ী পোল্ট্রি ফার্মের ওষুধ ব্যবস্থাপক মোঃ ফারুখ মিয়া বলেন, আমি নিজেই একদিন রাজবাড়ী সরকারী মুরগীর খামারে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম খামারে কোন প্রকার মুরগীর বাচ্চা নাই। আমাদের দরকার লেয়ারের বাচ্চা। লেয়ারের বাচ্চা যদি আমরা সরকারীভাবে স্বল্প মূল্যে পাই তাহলে অনেক সুবিধা হবে। কিছুটা হলেও আমরা লাভবান হবো। রাজবাড়ী সরকারী মুরগীর খামারটি যদি সরকারীভাবে বাচ্চা সরবরাহ করতে পারে তাহলে জেলার পোল্ট্রি শিল্প এগিয়ে যাবে।
খামারের মহিলা শ্রমিক হাজেরা বেগম জানান, সরকারী খামার থেকে যদি আমাদের মুরগীর বাচ্চা দিতো তাহলে মালিক শ্রমিকদের আরও বেশী সুযোগ-সুবিধা দিতে পারতো। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বচ্ছলভাবে চলতে পারতাম। সরকারের কাছে আমরা আবেদন করি, সরকার যেন সরকারীভাবে মুরগীর বাচ্চা দেয়। খামারের মালিকরা লাভবান হলে আমরা শ্রমিকরাও বেতন ঠিকমতো পাবো।
খামারটির বেহাল দশা ও অবকাঠামোর সংস্কারের কথা স্বীকার করে খামারের সংস্কারের কথা জানালেন সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নুরুল্লাহ্ আহ্সান।
তিনি জানান, রাজবাড়ী সরকারী হাঁস-মুরগীর খামারটি একটি বাচ্চা পালন কেন্দ্র। খামারটি ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর টার্গেট অনুযায়ী ২০ হাজার বাচ্চা পালন করা হচ্ছে। খামারের অবকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। ম্যানেজারের বাসভবন, রেস্ট হাউজ ও মুরগীর শেডগুলো নষ্ট। যেহেতু ৩একর জমিতে খামারটি অস্থিত সেহেতু খামারটিকে হ্যাচারীতে রূপান্তর করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে গড়ে তোলা হলে এলাকার জনগণ অনেক উপকৃত হবে। গবাদী প্রাণিসহ হাঁস-মুরগীর খামারের বিপ্লব ঘটবে।
খামারের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে খামারটি অতি দ্রুত আধুনিকরণের আশা প্রকাশ করলেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ গনেশ চন্দ্র মন্ডল।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী জেলার একমাত্র খামারটি দীর্ঘদিন ধরে তদারকি খাতে কোন বরাদ্দ না থাকায় মেরামতের অভাবে ৪টি শেডের মধ্যে ২টি শেড চালু আছে। যে দুটি শেড চালু আছে তা মেরামত না হলে সে দুটিও অকেজো হয়ে পড়বে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসার অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। খামারটির আধুনিকায়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক প্রাক্কলন প্রস্তুত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। অতি শীঘ্রই খামারটির আধুনিকায়ন হবে বলে আশা করা যায়।
সরকারী এই হাঁস-মুরগীর খামারটির অবকাঠামো উন্নয়ন ও মেরামত করে খামারটিকে বাচ্চা উৎপাদনের হ্যাচারীতে রূপান্তর করে জেলায় প্রাণি সম্পদ উন্নয়নে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা জেলাবাসীর।