শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

দেশে যথাসময়েই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ যথাসময়ে নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে সকল শংকা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে যথাসময়েই আগামীর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা যখন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা দেবে, তখনই নির্বাচন হবে। বাংলাদেশে এই নির্বাচন অবশ্যই হবে-এটাই আমি বিশ্বাস করি।’
গতকাল ২২শে অক্টোবর বিকালে গণভবনে সাস্প্রতিক সৌদি আরব সফর নিয়ে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
দেশে আগামী নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আশংকা থাকা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা সংশয়ের সৃষ্টি করছে কারণ তাদের আসল উদ্দেশ্য বাংলাদেশে আর যেন গণতন্ত্র না থাকে এবং দেশে গণতন্ত্র না থাকলেই তাদের জন্য নানারকম সুযোগ সৃষ্টি হয়।’ সৌদি আরবে সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিতকরণে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন হলেও এতে প্রাসঙ্গিকভাবেই আগামীর জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী বিরোধী জোটের জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে এক নারী সাংবাদিকের মামলা, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং তথাকথিত সুশীল সমাজের ভূমিকা ঘুরে ফিরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে চলে আসে এবং প্রধানমন্ত্রীও তার অনুপুঙ্খ উত্তর দেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ.এইচ মাহমুদ আলী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।
প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এখানে সরকারের কোন ভূমিকা নাই। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারা স্বাধীনভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা চাই, বাংলাদেশে যথাসময়ে নির্বাচন হোক এবং সুষ্ঠুভাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে-সেটা আমরা বিশ্বাস করি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গে বলেন, ষড়যন্ত্রটাতো বাংলাদেশে চিরাচরিত একটা বিষয়, প্রতিনিয়তই ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এটা চলবে এবং থাকবে আর এর মধ্যদিয়েই তো বাংলাদেশকে আমরা আর্থ সামাজিকভাবে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছি। ষড়যন্ত্র তো কম হয়নি। কিন্তু সবকিছু মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারছি, তার কারণ একটাই। জনগণই শক্তি আমাদের।
বঙ্গবন্ধু কন্যা এ সময় জনগণের ক্ষমতার ওপর তার অগাধ আস্থা ব্যাক্ত করে বলেন, ‘আমি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি, আমার ওপর জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস আছে বলে আমি মনে করি। কাজেই এদেশে যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, সেটাই আমি চাই। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা সে নির্বাচন করতে সক্ষম হব। যেকোন ষড়যন্ত্র হোক তা মোকাবেলা করবার মতো শক্তি আওয়ামী লীগ রাখে আর আমার সরকারও রাখে।’
আরেক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ এর নির্বাচন ঠেকাতে অনেক চেষ্টা হয়েছে। বিদেশি বন্ধু নিয়েও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। কারণ জনগণ সচেতন ছিল। আমার বিশ্বাস এবারও জনগণ সচেতন রয়েছে। কাজেই তাদের কোনো নালিশ কাজে আসবে না।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্য গঠন সম্পর্কে বলেন, তাদের মেকিং এবং ব্রেকিং নিয়ে চিন্তার কিছু নাই। আপনারা দেখতে থাকেন এই ভাঙ্গাগড়ার খেলা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। আমি দেখতে চাই তারা ঐক্য গড়ে সিলেটের মাজার থেকে নির্বাচনী প্রচারে নামবে, সেটাতো খুব ভালো কথা। কিন্তু এর বাইরে দেশে আবার যদি কেউ অগ্নিসন্ত্রাস করতে চায় তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তাতো করবোই এবং আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের জনগণও রুখে দাঁড়াবে। আমি জনগণের কাছে সেই আহ্বানই জানাবো যে, এ ধরনের কোন ষড়যন্ত্র হলে তারা যেন সকলে মিলে রুখে দাঁড়ায়। তাহলে আর কেউ কিছু করতে পারবে না।
ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে তো রাজনৈতিক স্বাধীনতা রয়েছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা আছে, সব কিছু মুক্ত। তবে কারা কারা এক হলো সেটা আপনারা একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন। যারা সেখানে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তারা কোথা থেকে এসেছে, কার কী ধরনের ভূমিকা, কী ধরনের বাচনভঙ্গি, এমনকি মেয়েদের প্রতি যে কী ধরনের কটুক্তি করতে পারে, সে প্রতিযোগিতাও তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করে না। বরং একটা হয়েছে, এটাই ভালো। এখানে স্বাধীনতা বিরোধী আছে, এখানে জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদদদাতা, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরী দিয়ে পুরস্কৃত করা, এমনকি যারা জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে, তারা মিলেই কিন্তু এক জায়গায় হয়েছে। এটাকে বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে দেখে সেটাই বড় কথা।
নারী সাংবাদিককে টেলিভিশন লাইভে কটুক্তি করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মইনুল হোসেনের কঠোর সমালোচনা করে এই নেতার অতীতের নানা নেতিবাচক ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি আরও ঘটনা জানেন, সময় মতো প্রকাশ করবেন। তিনি মইনুলের বাচনভঙ্গী নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, তার অ্যাটিচিউডই ছিল খারাপ। কার কাছ থেকে কী আশা করবেন? প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের দালালী করে বেড়াতেন মইনুল হোসেন। ইত্তেফাক থেকে সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনকে তুলে নেয়ার পেছনেও মইনুলের দায় ছিল বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে তার দলে যোগ দেন মইনুল হোসেন। এরপর তিনি নিজেও খুনী বজলুল হুদা, আজিজ পাশা এবং সুলতান শাহরিয়ার খানকে নিয়ে দল করেন। তার কাছ থেকে ভালো ভদ্র ব্যবহার আর কী পাবেন! দুই ভাই মইনুল হোসেন এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মধ্যে ইত্তেফাকের মালিকানা নিয়ে দ্বদ্বের জেরে খুনের ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজে মার্ডার করে ভাইকে ফাঁসানোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। কাকরাইলের বাড়ী নিয়েও ঝামেলা আছে। সেখানেও স্টেট ভার্সাস মামলার রায় আছে, আপনারা সাংবাদিকরা আছেন, বের করে দেখেন।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক মাসুসদা ভাট্টি যেমন মইনুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তেমনি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পক্ষ থেকেও আইনী নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, তাকে জামায়াত বলে সম্মানহানীর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রমাণ দিতে না পারলে মামলা করার হুঁশিয়ারীও দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, এই মামলা হতে পারে না। তারপরও বিচারকরা যদি মামলা নেন তাহলে বলার কিছু নেই।
মইনুলের জামায়াত সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে হয় কেন- এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিবিরের অনুষ্ঠানে গিয়ে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেটা খুঁজে বের করেন। প্রমাণ তো আছেই, ভিডিও তো আছেই। ইত্তেফাকেই ছাপা হয়েছে। সেটা বের করে প্রমাণ করে দিয়ে দেন। তিনি যে শিবিরের মিটিংয়ে গিয়ে বক্তৃতা দিলেন, তাতে জামায়াত সমর্থন সে করে না, সেটা সে কী করে বলবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি বলতে চাই, আপনারা যারা নারী সাংবাদিক, তারাইবা কী করছেন। নারী সাংবাদিকরা আপনারা প্রতিবাদ করেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা করার করবে। আপনারা মামলা করেন। আমরা যা করার করব।’
নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভা গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, গত নির্বাচনে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছিলাম যেন তারা মন্ত্রীসভায় আসে। সবাই মিলে একটা মন্ত্রীসভা করে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আসেনি। পরবর্তীতে আমরা মন্ত্রীসভা ছোট করে একটা নির্বাচন করেছি। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট আলাদা। আগের মন্ত্রীসভায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল ছিল না। এখন জনগণের প্রতিনিধিদের প্রায় সবাই মন্ত্রীসভায় রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেকগুলো উন্নয়নমূলক প্রকল্প চলমান রয়েছে। অনেক কাজ করতে হবে। মন্ত্রীসভা ছোট হলে আমাদের উন্নয়নে সমস্যা হবে কিনা সেটাই ভাবছি। এখন মন্ত্রীসভা ছোট করে একজনকে দু’তিনটা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলে পারবে কিনা, এতে উন্নয়নে বাধা হবে কিনা সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। আগামী ৩/৪ মাসে উন্নয়ন কর্মকান্ডকে আরও এগিয়ে নিতে চাই। যা হোক, আমি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এভাবে নির্বাচন হয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, ভারতের মতো দেশে এভাবে নির্বাচন হয়ে থাকে।
নির্বাচন বানচালে কোন কোন মহলের দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জনগণের ক্ষমতার ওপর তার আস্থা পুনর্ব্যাক্ত করে তাদের সহযোগিতায় জঙ্গীবাদ মোকাবেলার উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, আজকে যে পূজা হয়ে গেলো-আল্লাহর রহমতে কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে নাই। এখানে যেমন আমাদের গোয়েন্দা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা তারা যেমন সবসময় সচেতন থেকে সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে সেই সাথে সাথে আমার দেশের মানুষ, তারাও কিন্তু সচেতন ছিল। আর সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে আমরা এটায় সফল হতে পেরেছি। তিনি একটি সুস্থ্য পরিবেশে প্রতিটি মন্ডপে সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হওয়ায় গোয়েন্দা এবং কর্তব্যরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ জানান।
তারপরেও বাংলাদেশে অতীতে অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, দুর্ঘটনা ঘটেছে, এমন একটি বিয়োগান্তক ঘটনার শিকার হয়ে তিনি পুরো পরিবারকেই হারিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন ঘটনা ঘটতে পারে তবে, আমি এটুকু বলতে পারি যতক্ষণ বেঁচে আছি, বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আর কাউকে এই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করবে, পুড়িয়ে মারবে, এ ধরণের ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সেজন্য যা যা করণীয় সেটা করবো। শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ যেন শান্তি ও নির্বিঘেœ বসবাস করতে পারে এর জন্য যে কাজ করা দরকার আমরা তা করবো-এইটুকুর নিশ্চয়তা দিতে পারি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!