॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা গতকাল ১৬ই সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু নাসার উদ্দিন, কালুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেবিএম সাদ্দাম হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম গোলদার, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমীর করিমী, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আলীমুর রেজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ স্বপন কুমার কুন্ডু, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম আজম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মজিনুর রহমান, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও কমিটির অন্যান্য সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, রাজবাড়ী জেলায় বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নদী ভাঙ্গন। রাজবাড়ী শহরের গোদার বাজারসহ সদর, গোয়ালন্দ, কালুখালী ও পাংশা উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন জায়গায় নদী ভাঙ্গন কবলিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করে যাচ্ছে। রাজবাড়ী শহরের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র গোদার বাজার এলাকায় ব্লক স্লোপের যেসব জায়গায় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে তার প্রধান কারণ ব্লক স্লোপকে প্রটেকশন করার জন্য যে ডাম্পিং ব্লক রয়েছে প্রচন্ড ¯্রােতে তার নীচ থেকে বালু সরে যাওয়ায় ব্লকগুলো সরে যাওয়া। আর পাংশার হাবাসপুরসহ কালুখালী এলাকায় যে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে তার কারণ রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের ভারী মেশিনারিজ পরিবহনের জন্য জলযান চলাচল নিশ্চিত করতে যে ড্রেজিংয়ের কাজ করা হয়েছে তার জন্য ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের জলযান চলাচলের জন্য যে ড্রেজিং প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তার প্রকল্প কর্মকর্তার সাথে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করার আগে কথা ছিল পাবনা ও রাজবাড়ী জেলার জেলা প্রশাসক, জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়ে রাজবাড়ীতে একটি সমন্বয় সভা করার। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় প্রকল্প পরিচালক এই ধরনের কোন সমন্বয় সভা না করে ঢাকায় একটি সভা করে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করেন। এই ড্রেজিংয়ের মাটি রাজবাড়ী জেলার যেসব এলাকা ভাঙ্গন কবলিত সেখানে ফেলার কথা থাকলেও তা না করে পাবনার অংশে ফেলা হয়েছে। আবার এই প্রকল্পটি যেহেতু একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প এবং মোংলা থেকে পদ্মা নদীর রাজবাড়ীর অংশ দিয়ে বড় বড় জাহাজ রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে যাবে সেহেতু এই এলাকায় নদী শাসন ও ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা কি হবে তা সার্ভে করে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার দরকার ছিল। কিন্তু সেটা করা হয়নি। ভবিষ্যতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকলে ও নদী দিয়ে বড় বড় জলযান চলাচল করলে রাজবাড়ী জেলার নদীর ভাঙ্গন আরো তীব্র হয়ে অনেক এলাকার অস্তিত্ব সংকট দেখা দিবে। বিষয়টি রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম জাতীয় সংসদের উত্থাপন করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন বলে আমাকে অবহিত করেছেন। হয়তো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে আছে। আমরা আশা করবো আগামী শুষ্ক মৌসুমে ড্রেজিং কাজ শুরুর আগে নদী শাসনের ব্যপারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পরবর্তীতে ড্রেজিং কাজ শুরু করা হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সড়ক বিভাগের তথ্য মতে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ীর শ্রীপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ১ম ধাপ, বাস টার্মিনাল থেকে জেলখানা পর্যন্ত ২য় ধাপের ফোরলেনের কাজের অগ্রগতি সাধিত হলেও জেলখানা থেকে পাংশার শিয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত ৩য় ধাপ ও বাগমারা থেকে ধাওয়াপাড়া ফেরী ঘাট পর্যন্ত ৪র্থ ধাপের কাজ এখন পর্যন্ত শুরুই করা হয়নি। এমনকি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যান চলাচলের রাস্তাগুলো যান চলাচলের উপযোগী রাখতে কোন রকম রিপেয়ারও করেনি যা খুবই দুঃখজনক। আমি আশা করবো সড়ক বিভাগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দ্রুত রাস্তা রিপেয়ার করে যান চলাচলের উপযোগী করবে।
এছাড়াও সভায় রাজবাড়ীর পুলিশের জন্য একটি স্বতন্ত্র ফায়ারিং রেঞ্জ নির্মাণ, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বয় সভা, বিনোদপুরে নির্মাণাধীন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ওএমএসের চাল ও গম বিক্রি, স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন বিষয়, জেলা ও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্প, মডেল মসজিদ নির্মাণ, ধাওয়াপাড়া ঘাটে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রাজবাড়ী পৌর এলাকায় পানির লাইন নির্মাণ, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়, উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণ, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগসহ জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।