॥রফিকুল ইসলাম/চঞ্চল সরদার॥ রাজবাড়ী জেলা কৃষক লীগের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি ও আলোচনা সভা গতকাল ১৫ই সেপ্টেম্বর বিকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম।
সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার।
জেলা কৃষক লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু বককার খানের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রোকনুজ্জামান বকুল, সহ-সভাপতি মোমিন শেখ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বদর উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মোল্লা, কালুখালী উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক শিশির কুমার সিকদার, বরাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেছেন খানসহ কৃষক লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে। এসব আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষক আগের তুলনায় কম খরচে বেশী ফসল ঘরে তুলছে। কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে কৃষি ঋণ দেয়া হচ্ছে। সার ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে উন্নতজাতের বীজ, সার ও নানা ধরনের কৃষি উপকরণ কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে সারের জন্য কৃষককে গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। তখন সারের দাম ছিল ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৃষককে আর সারের জন্য গুলি খেয়ে মরতে হয় না। কৃষকেরা এখন মাত্র ১৬ কেজিতে সার পাচ্ছে। এখন বিদ্যুতের লোডশেডিং নাই। আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই সকল ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। তখন সেচযন্ত্র চালাতে আর কোন সমস্যা হবে না। কৃষকদের জীবনমানের আরো উন্নয়ন হবে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে। কৃষক লীগকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শক্তিশালী করতে হবে। আগামী নির্বাচনে তাদেরকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি জেলা কৃষক লীগের নবনির্বাচিত কমিটির নেতৃবৃন্দকে শুভেচ্ছা জানান এবং সবসময় তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
সম্মানিত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, কৃষক আমাদের প্রাণ। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উপাদন করে আমাদেরকে খাদ্য জোগায়। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ এখনও কৃষির উপর নির্ভরশীল। দেশের অর্থনীতিতে কৃষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারের সময়ে কৃষকরা অত্যন্ত ভালো আছে। তারা সময়মতো কমমূল্যে সার পাচ্ছে। এখন আর তাদেরকে সারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে দেশের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। শুধু কৃষিই নয়, সকল সেক্টরেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সর্বত্র উন্নয়ন হচ্ছে। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে। পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষের আয় বেড়েছে। স্বাস্থ্যসেবাকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সরকার নারীদের উন্নয়নে কাজ করছে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, উপবৃত্তিসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অনেক ভাতা দেয়া হচ্ছে। গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের মধ্যে ১০টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কারণেই এসব সম্ভব হচ্ছে। তাই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ধরে রাখতে চাইলে এবং সুখে শান্তিতে থাকতে চাইলে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে তাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে। তাহলে আমরা শেখ হাসিনার ভিশন অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবো। কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনগুলো প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষিজীবী মানুষের মধ্যে যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। তিনিও জেলা কৃষক লীগের নবনির্বাচিত কমিটির নেতৃবৃন্দকে শুভেচ্ছা জানান এবং এই সুন্দর আয়োজনের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানান।
জেলা কৃষক লীগের সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাজবাড়ীতে কৃষক লীগ এখন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করার জন্য কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা তাদের সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে।
জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু বককার খান বলেন, নবনির্বাচিত জেলা কমিটির নেতৃত্বে কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার জন্য ঐক্যবদ্ধাবে কাজ করবে। তিনি কৃষক লীগের কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, জেলা কৃষক লীগের নবনির্বাচিত কমিটির এই পরিচিতি সভা ও আলোচনা সভা উপলক্ষ্যে দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা স্বতস্ফূর্তভাবে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এসে সমবেত হতে থাকে। আস্তে আস্তে তা জনারণ্যে রূপ নেয়। কৃষক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ২সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী এতে অংশগ্রহণ করেন।