মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৬:৫৮ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের সাথে একযোগে বিদ্যুৎ ও রেল যোগাযোগের তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানীর পরিকল্পনা করেছে এবং আশা করছে এ প্রক্রিয়ায় ভারত তাদের পাশে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামোর অধীনে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানীর পরিকল্পনা করছি। আমি আশা করি, এই লক্ষ্য অর্জনে ভারত আমাদের পাশে থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ১০ই সেপ্টেম্বর বিকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একযোগে বিদ্যুৎ ও রেল যোগাযোগের তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন। প্রকল্পগুলো হচ্ছে ঃ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫শ মেগাওয়াট এইচভিডিসি(২য় ব্লক) প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ ও ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ নির্মাণ(বাংলাদেশ অংশ)।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নয়াদিল্লীস্থ তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী কোলকাতা থেকে এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আগরতলা থেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। ই-সুইচ টিপে দুই প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী একযোগে প্রকল্প তিনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, জ্বালানী উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধণ শ্রীংলা এ সময় গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অন্বেষায় সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী হোক আমরা সেটাই চাই। যার ফলে দু’দেশ আরো একসঙ্গে কাজ করে দু’দেশের জনগণের উন্নতি সাধন করতে পারবে। আমি নিশ্চিত যে, আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় অনেক সাফল্যগাঁথা আগামীতে আমাদের সামনে উপস্থাপিত হবে যা আমরা উদযাপন করতে পারবো। ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমানা সমস্যার সমাধান হয়েছে। ভারতের সকল সংসদ সদস্যকে আমি এ জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কারণ তারা সকলে এক হয়ে এই স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন। ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে সবসময় যে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়, এখানে সেটিই আবার প্রমাণিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি আমরা আমাদের অন্যান্য সমস্যাগুলোরও সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই আমি আশা করি, আমাদের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। ভবিষ্যতে আরো সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র নিয়ে আমরা দুই দেশের জনগণের সামনে উপস্থিত হতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ খাত আমাদের দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বর্তমানে ভারত থেকে আমরা ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী করছি। ভারত থেকে আরও ৩হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গত সাড়ে ৯ বছরে ৩হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। আমরা ১৩হাজার ৬৯০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ৫৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি।
আমাদের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আরও বিদ্যুৎ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আরো ৫শ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রদানের সামর্থ্য পশ্চিমবঙ্গের রয়েছে এবং কেন্দ্র অনুমতি দিলে সেই বিদ্যুৎ তারা বাংলাদেশে রপ্তানী করতে চান। তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরো ৫শ মেগাওয়াটসহ মোট এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানীর আগ্রহ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে মমতা আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে আপনি জিতুন, তখন আমি বাংলাদেশে যাবো।
রেলওয়ে খাতেও আমাদের দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য আমরা ১৯৬৫ পূর্ব রেল সংযোগ পুনরায় চালু করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি আশা করি, আমরা শীঘ্রই লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ভারতীয় অর্থায়নে যৌথভাবে ঢাকা ও টঙ্গীর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ রেললাইন এবং টঙ্গী ও জয়দেবপুরের মধ্যে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণের ভিত্তিফলক স্থাপন করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতার শুরুতেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও জনগণের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও সেদেশের জনগণের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে আমরা সবসময়ই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। এটি আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে চিরদিনই একটি মাইলফলক হিসেবে বজায় থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দু’দেশের মধ্যে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ব্লুু-ইকনোমি, সামুদ্রিক সহযোগিতা, পারমাণবিক শক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ গবেষণার মত নতুন নতুন ক্ষেত্রগুলোতেও আমরা কাজ শুরু করেছি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার ভাষণে ১৯৬৫ সালের পূর্বে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যমান রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেন, আখাউড়া-আগরতলা রেল কানেকটিভিটির কাজ সম্পন্ন হলে আমাদের আন্তঃ দেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি যোগসূত্র স্থাপিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যে মহৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন-২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা, তার লক্ষ্য সফল করার ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করতে পারাটা একটি গর্বের বিষয়। আমি বিশ্বাস করি যেভাবে আমরা আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করবো এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে হৃদ্যতা শক্তিশালী করবো, সেভাবেই আমরা উন্নতি এবং সমৃদ্ধির নবদিগন্ত উন্মোচিত করতে সক্ষম হবো। এরপর তিনি বাংলায় বলেন, আজ থেকে আমরা আরো কাছে এলাম, আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে আখাউড়া, ভেড়ামারা এবং কুলাউড়ার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয় জানায়, ৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৩শ মেগাওয়াট সরবরাহ করবে ভারতের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট এবং ২শ মেগাওয়াট সরবরাহ করবে প্রাইভেট পাওয়ার ট্রেডিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া। এই ৫শ মেগওয়াট যোগ হওয়ায় ভারত থেকে আমদানী করা বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১৬০ মেগাওয়াট।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫৩ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্যরে ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনঃ নির্মাণে ব্যয় হবে ৬৭৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ভারতের এলওসি’র আওতায় এই নির্মাণ ব্যয়ের ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেয়া হবে। ব্রিজ, প্যাসেঞ্জার প্লাটফর্ম, শেড, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ভবন এবং অন্যান্য স্থাপনা এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!