॥দেবাশীষ বিশ্বাস॥ মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করতে রাজী না হওয়ায় রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের খামার মাগুরা গ্রামের হাসনা গৃহবধু খাতুন (৩০)কে দেড় মাস ধরে স্বামীর মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
খবর পেয়ে বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ গত ২২শে আগস্ট ঈদের দিন দুপুরে তাকে শিকলবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে এবং অভিযুক্ত স্বামী আইয়ুব আলী মোল্লা (৪৫)কে গ্রেফতার করেছে।
হাসনা খাতুনের চাচা জিল্লুর রহমান জানান, গত ৬মাস পূর্বে খামার মাগুরা গ্রামের মান্নান মোল্লার ছেলে আইয়ুব মোল্লার সাথে হাসনা খাতুনের বিয়ে হয়। তাকে নির্যাতন করার খবর শুনে ঈদের দিন সকালে ভাতিজীতে দেখতে আসলে আইয়ুব মোল্লা তাকে ঘরে ঢুকতে বাঁধা দেয়। এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরে প্রবেশ করলে হাসনাকে দুই হাতে ও দুই পায়ে পেরেক দিয়ে ছিদ্র করে শিকল দিয়ে বাঁধা ও মুখ কচটেপ দিয়ে আটকানো অবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়া তার মাজার নীচের দিকে রড দিয়ে জখম করে পটাশ সার মিশ্রিত পানি দিয়ে পচন ধরানো হয়েছে। এ অবস্থায় বালিয়াকান্দি থানায় খবর দিয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
বালিয়াকান্দি থানার এস.আই অংকুর কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ওই গৃহবধুর চাচার কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনি এবং এএসআই কিরণ সঙ্গীয় ফোর্সসহ সেখানে গিয়ে তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করাসহ স্বামী আইয়ুব আলী মোল্লাকে গ্রেফতার করেন। এরপর সেখান থেকে খবর দিয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এ্যাম্বুলেন্স ও ডাক্তার নিয়ে এসে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
যোগাযোগ করলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে জানানো হয়, হাসনা খাতুনকে প্রচন্ড নির্যাতন করা হয়েছে। মাজার নীচের অংশে পচন ধরাসহ তার একটি পা-ও ভেঙ্গে গেছে।
বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, নির্যাতিতা গৃহবধু হাসনা খাতুন রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের জহির ব্যাপারীর মেয়ে। ডিভোর্সী থাকা অবস্থায় ৬মাস পূর্বে আইয়ুব আলী মোল্লার সাথে তার বিয়ে দেয়া হয়। এটি আইয়ুব আলীর ৪র্থ বিয়ে। আগের ৩ স্ত্রীর মধ্যে ২জন তাকে ছেড়ে গেছে এবং আরেকজন মেগচামী গ্রামের বাবার বাড়ীতে থাকে। হাসনা খাতুনকে বিয়ে করার কিছুদিন পর আইয়ুব আলী শেখ তাকে দিয়ে একই গ্রামের (খামার মাগুরা) হারুন নামের একজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হাসনা এতে রাজী না হওয়ায় তার উপর বর্বর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে।
সর্বশেষ খবরে জানাযায়, নির্যাতিত হাসনা খাতুনের চাচা জিল্লুর রহমান বাদী হয়ে গত ২৩শে আগস্ট বালিয়াকান্দি থানায় মোঃ আইয়ুব আলী মোল্যাকে আসামী করে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা দায়ের করেছে।
বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ হাসিনা বেগম জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামী আইয়ুব আলী মোল্যাকে আজ ২৫শে আগস্ট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। থানার এস.আই অংঙ্কুর মামলার তদন্ত করছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইতিপূবর্বে আইয়ুব মোল্যা ৪টি বিবাহ করে সবাইকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে।