॥হেলাল মাহমুদ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পৌরসভার কছিমদ্দিন সরদার পাড়ার মাসুদ সরদারের স্ত্রী দুই সন্তানের জননী সুরভি আকতার(২৫) ক্রিকেট খেলায় বাজি ধরে হেরে যাওয়ায় স্বামীর সাথে ঝগড়া করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ২২শে জানুয়ারী দিনগত মধ্যরাতে। তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকার কয়েকজন জানান, গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনের খাজা অফিস সংলগ্ন সালাম সরদারের মেয়ে সুরভী আক্তার বাবার বাড়ীর কাছেই শ্বশুর বাড়ী হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই বাবার বাড়ীতে আসা-যাওয়া করে। বাবার বাড়ী সংলগ্ন সেলিম স্টোর নামের একটি মুদি দোকানে দীর্ঘ দিন ধরে ক্রিকেট, ফুটবলসহ নানা খেলা নিয়ে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা চলে। এলাকার যুব, বয়স্ক এমনকি নারীরা বিভিন্ন সময় ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার জুয়ায় অংশ নেয়। কে হারবে, জিতবে, কোন খেলোয়াড় কত রান করবে, কত উইকেট নেবে, কয়টি গোল করতে পারে এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে টাকার বিনিময়ে বাজী ধরা হয়। ৫০০টাকা থেকে শুরু করে ২০হাজার টাকা পর্যন্ত বাজি চলে। গত রোববার বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের খেলা নিয়ে অন্যান্যদের সাথে সুরভিও বাজি ধরে। প্রথম পর্যায়ে সুরভি ১৫হাজার টাকা জিতলেও পরবর্তীতে কয়েক ধাপে সে প্রায় ৪০হাজার টাকা লোকসান খায়। এভাবে মাঝে-মধ্যে খেলায় এবং সংসারে টানাপোড়েনে প্রায় এক লাখ টাকার মতো ঋণ হয়। ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। রোববার মধ্যরাতে এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে স্বামী বাইরে যায়। এক পর্যায়ে গৃহবধু নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহননের চেষ্টা করে। তার চিৎকার শুনে পরিবার ও আশপাশের লোকজন আগুন নিভিয়ে দ্রুত তাকে নিয়ে যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরদিন সোমবার তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের বুক ও হাতের প্রায় ১০শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এখানে বার্ন ইউনিট না থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার সকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গৃহবধুর শ্বশুর মোসলেম সরদার জানান, বেশ কিছু টাকা দেনা হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এছাড়া ঘটনার দিন শুনেছি তার বাবার বাড়ীর পাশের একটি দোকানে বসে ক্রিকেট খেলায় বাজি ধরে অনেক টাকা হেরেছে। পরে টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ক্ষোভে নিজেই শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। গৃহবধুর বাবা সালাম সরদার বলেন, স্থানীয় সেলিম শেখের মুদি দোকানে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন খেলাধুলায় টাকার বিনিময়ে বাজি ধরে অনেকে। এতে এলাকার ছেলে মেয়ে অনেকে টাকা পয়সা শেষ করে দিচ্ছে। কৌতুহল বশতঃ সুরভিও বাজি ধরে অনেক টাকা লোকসান খেলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়।
এ নিয়ে তার কোন অভিযোগ না থাকায় আমরাও থানায় অভিযোগ করিনি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশন খাজা অফিস সংলগ্ন সেলিম শেখের মুদি দোকান বন্ধ দেখা যায়।
পরে সেলিম স্থানীয় লোকজন সাথে করে সাংবাদিকদের কাছে এসে অভিযোগ স্বীকার করে জানান, এখন থেকে দোকানে এ ধরণের আর কোন ঘটনা ঘটবেনা। এবারের জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।