॥দেবাশীষ বিশ্বাস/কাজী তানভীর॥ নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাজবাড়ীতেও মাঠে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল ৪ঠা আগস্ট তারা অবস্থান কর্মসূচী, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে তারা।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল ১০টার পরে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হালিম বাবুর সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচী চলাকালে জেলা সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভরত চন্দ্র দাস, ডাঃ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার মুনমুন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কায়সার আহম্মেদ রিপন ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাতুল হাসান জনিসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচী চলাকালে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনের অবস্থান কর্মসূচীতে যাওয়ার সময় পান্না চত্বর এলাকায় স্কয়ার ওষুধ কোম্পানীর একটি কাভার্ডভ্যান অবরোধ করে ঘিরে ধরে তার লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজপত্র আছে কিনা সেটা দেখতে চায়। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীরা যাতে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা না করে সে জন্য তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। ঢাকা-মেট্রো-উ-১১-১০৯৮ নম্বরের ওষুধের কাভার্ড ভ্যানটির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ট্রাফিক সার্জেন্ট চেক করে সঠিক আছে জানানোর পর শিক্ষার্থীরা আটককৃত কাভার্ড ভ্যানটি যেতে দেয়।
এরপর বিক্ষোভ মিছিলটি পান্না চত্বর থেকে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের অভিমুখে যাওয়ার সময় বিভিন্ন যানবাহন আটকে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছানোর পর সেখান অবস্থানকারীদের তারা মানববন্ধন পালন করে।
তখন সেখানে উপস্থিত হয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এরশাদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ঢাকায় বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রদের সকল যৌক্তিক দাবী মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছেন। এরশাদ ছাত্র-ছাত্রীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ মানববন্ধন থেকে বের হয়ে মিছিল করতে করতে প্রধান সড়ক দিয়ে রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে তোপের মুখে রাজবাড়ীতে আসা ঢাকার শ্রম আদালতের জজের ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারের চালক হায়দার আলী। এ সময় ছাত্রদের চাপে ওই জজের গাড়ী চালকের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হয় ট্রাফিক পুলিশ। ঢাকা-মেট্রো-খ-১৩-২৯২৪ নম্বরের ওই গাড়ীর চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করে মেয়াদোত্তীর্ণ পাওয়া যায়।
শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভের খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি, বিপিএম-সেবা, পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ ছাদেকুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল করিম, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ এবং সদর থানা মোঃ তারিক কামাল ও ডিবির ওসি মোঃ কামাল হোসেন ভূঁইয়াসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ মাঠে নেমে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করে।
রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী ও পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে স্কুলে ফেরত পাঠায়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলের আরেকটি অংশ রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের পাশ দিয়ে হাসপাতাল সড়কের মা ক্লিনিকের সামনে গিয়ে অবস্থান করলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ রাজীব, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এরশাদ ও সদর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি সামছুল সালেহীন অপুসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বুঝিয়ে স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়। এসব ঘটনায় পুলিশ বাহিনী ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়ে কোন লাঠিচার্জ বা কাউকে আটক করেনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ডাঃ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, রাজবাড়ী সরকারী কলেজ, সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজ, সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, অংকুর স্কুল এন্ড কলেজ, সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সারাদিনই বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।