॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন, সামাজিক বন বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে গতকাল ২২শে জুলাই সকালে ৫দিনব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা এবং ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালী ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের আম্রকানন চত্বর থেকে র্যালী বের হয়ে একই স্থানে শেষ হয়। র্যালীতে প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ) ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান খান, ফরিদপুর অঞ্চলের সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক ভুঁইয়াসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, কৃষি বিভাগ ও বন বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
র্যালী শেষে বেলা ১২টায় রেলওয়ে আজাদী ময়দানে প্রধান অতিথি হিসেবে বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা এবং ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ উদ্বোধন করেন ও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী,এমপি।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান খান ও ফরিদপুর অঞ্চলের সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক ভুঁইয়া বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দিন শেখ।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে জেলা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সভাপতি আবুল হোসেন, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ, নার্সারীর মালিকগণসহ বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষমেলা সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন রাজবাড়ী সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্ম্মল কুমার দত্ত ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মানিক দাস।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর মাধ্যমে বৃক্ষরোপণের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ী জেলায়ও বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আর সরকারের এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীকে সফল করতে আমাদের সকলের উচিত যার যতটুকু জায়গা আছে সেই জায়গায় বৃক্ষরোপণ করা। এ জন্য জেলায় যারা এই বৃক্ষরোপণের সাথে সংশ্লিষ্ট আছেন তারা যেন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে গাছের চারা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী সফল হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি অতীত থেকেই বিশ্বাস করি একজন শিক্ষার্থীর সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাও গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিষয়টি আজ থেকে ৫বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ভাইকে বলেছিলাম। কিন্তু আল্লাহর কি রহমত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। যাতে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিটি সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২টি করে কারিগরি ট্রেড চালু করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করছি। আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজেদেরকে গড়ে তুলবে।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে উপস্থিত সকলকে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। বক্তব্যের শেষে তিনি বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা এবং ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
সম্মানিত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী বলেন, দেশে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন এবং ফলদ ও বনজ বৃক্ষ ব্যাপক হারে রোপণের উদ্যোগের ফলে আজ দেশ খাদ্য ও ফল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আর সেই কারণে আজ মানুষের খাদ্য ও ফলের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হয়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোন বিকল্প নাই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, রাজবাড়ী জেলা একটি কৃষি নির্ভর জেলা। বর্তমানে এ জেলা খাদ্য ও ফল উৎপাদনে দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সারা দেশের অন্য যে কোন জেলার তুলনায় রাজবাড়ী জেলা সামাজিক বনায়নেও পিছিয়ে নেই। এর প্রধান কারণ জেলার মানুষের মধ্যে বৃক্ষরোপণ বর্তমানে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য মতে এবার আমের মওসুমে এই জেলায় ব্যাপক আম উৎপাদিত হয়েছে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই কৃষকরা আম বাজারে বিক্রি করার পরও অনেক অবিক্রিত আম নষ্ট হয়ে গেছে। এই উৎপাদিত ফল যাতে নষ্ট না হয় সেই লক্ষ্যে জেলায় প্রসেসিং ফ্যাক্টরী তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তবেই ফলচাষীরা উপকৃত হবে।
তিনি প্রত্যেককে বৃক্ষরোপণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলা একটি সবুজে ঘেরা বৃক্ষসমৃদ্ধ জেলা হিসেবে গড়ে উঠবে। এছাড়াও তিনি বর্তমান সরকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম সেবা বলেন, দেশের অন্য যে কোন জেলার তুলনায় রাজবাড়ী জেলা একটি বৃক্ষ সমৃদ্ধ জেলা। এই জেলায় যোগদানের পর আমি যেখানেই গিয়েছি সেখানেই প্রচুর বৃক্ষের সমারোহ দেখেছি। যা জেলার জন্য নিঃসন্দেহে একটি ভালো দিক। আমাদের সকলেরই মনে রাখা উচিত গাছ শুধু আমাদের জীবনই বাঁচায় না, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, স্বাস্থ্যের জন্য গাছ থেকে উৎপাদিত ফলে পুষ্টিসহ সর্বোপরি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবদান রাখে। সর্বদিক বিবেচনায় সামাজিক বনায়নের লক্ষ্যে সরকারের এই মহতী উদ্যোগকে সফল করার জন্য আমাদের সকলেরই বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন।
আলোচনার শেষে প্রধান অতিথি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী উপস্থিত শিক্ষার্থী, বৃক্ষপ্রেমী ও চাষীদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ করেন। পরে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিগণ বৃক্ষমেলার স্টলগুলো পরিদর্শন করেন।