॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে “পরিকল্পিত পরিবার, সুরক্ষিত মানবাধিকার” শীর্ষক শ্লোগানকে সামনে রেখে রাজবাড়ী পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আয়োজনে গতকাল ১১ই জুলাই সকালে র্যালী, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী কালেক্টরেটের আম্রকানন চত্বর থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় একই স্থানে এসে সমাপ্ত হয়। র্যালীতে আমন্ত্রিত অতিথিগণ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, এনজিও প্রতিনিধিগণসহ সংশ্লিষ্টরা অংশগ্রহণ করেন। র্যালী শেষে দিবসটির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোঃ আজম।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বিটিভির জেলা প্রতিনিধি মোঃ সানাউল্লাহ, জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি নেফাজ উদ্দিন ও জেলা এনজিও ফেডারেশনের সভাপতি লুৎফর রহমান লাবু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, এনজিও প্রতিনিধিগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, আজকে যে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে সেটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেই দূরদর্শী চিন্তাভাবনা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এই পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক দিয়ে আমাদের দেশের মতো আর একটি দেশও নাই। আমাদের যদি সার্বিক ক্ষেত্রে আরো উন্নয়ন করতে হয় তবে জনসংখ্যাকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচুর উন্নয়ন হচ্ছে। আর এই উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করতে হচ্ছে। আর আমাদের ভূখন্ডে এত জমি নেই যে যাতে করে সেখানে আমরা উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করতে পারি। এই উন্নয়ন কাজের জন্য ও অধিক জনসংখ্যার বাসস্থান নির্মাণের জন্য যে জমি ব্যবহার কার হচ্ছে তা সবই আবাদী কৃষি জমি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা বর্তমানে যে খাদ্যে স্বয়ং সম্পন্ন আছি সেটা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। যাতে করে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীরা জন্য আমাদের বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানী করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের ভিশন অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে আমাদেরকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকলকে আরো বেশী উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সমন্বিত কাজের বিভিন্ন বিষয়, পূর্বের তুলনায় বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠকর্মীদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করা, সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়, শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয়ের বিভিন্ন বিষয়, রাজবাড়ীর ২জন প্রাথমিক শিক্ষকের ছাত্রীদের যৌন হয়রানীর ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়, মানসম্মত শিক্ষার অভাবসহ জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধকল্পে আমাদের করণীয় সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
আলোচনা সভার শেষে জেলার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করার জন্য পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ উপজেলা, শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন, শ্রেষ্ঠ মাঠকর্মী, শ্রেষ্ঠ মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, শ্রেষ্ঠ এনজিও, শ্রেষ্ঠ বেসরকারী মাতৃসেবা প্রদানকারী ক্লিনিকের মধ্যে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ প্রদান করা হয়। শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাচিত হওয়া রাজবাড়ী সদর উপজেলার পক্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহণ করেন।