॥আশিকুর রহমান/দেবাশীষ বিশ্বাস॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানীবহ ইউনিয়নের বার্থা খানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাসের(৫২) বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ৯ই জুলাই সকালে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়রা প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাসকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা নৃপেন্দ্র নাথ সরকার ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অসীম কুমার দাস রাজবাড়ী জেলা শহরের পাবলিক হেলথ্ এলাকার বাসিন্দা। তিনি দুই সন্তানের জনক।
যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাস তাকে বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা বলে যৌন হয়রানি করে আসছেন। এক সপ্তাহ আগে প্রধান শিক্ষক তাকে বলেন ‘তুই হিন্দু কিংবা আমি মুসলমান হলে আমি আমার ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিতাম। আর আমার ছেলে যদি তোকে বিয়ে না করতো তাহলে আমি নিজেই তোকে বিয়ে করতাম।’ এছাড়া ওই ছাত্রী স্কার্প বা ওড়না পড়ে স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক নিজ হাতে তা খুলে লাইব্রেরীতে রেখে দিতেন এবং পরবর্তীতে তাকে স্কার্প ও ওড়না পড়ে আসতে নিষেধ করতেন বলে অভিযোগ করে ছাত্রী। প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে ওই ছাত্রী ওই স্কুল থেকে সম্প্রতি অন্য স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়েছে বলে দাবী তার।
গতকাল ৯ই জুলাই দুপুরে সরেজমিনে বার্থা খানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষকা বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষকের চরিত্র ভালো না। আমাদেরকেও উনি বিভিন্ন সময় অনৈতিক কথাবার্তা বলেন।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাস মাঝে মধ্যেই তিনি ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক আচরন করেন। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাজী মাহাতাব উদ্দিন বলেন, যৌন হয়রানির বিষয়টি সম্প্রতি ওই ছাত্রী তার মাকে বলে এবং তার মা বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়দের জানান। এ কারণে গতকাল সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীরা একত্রিত হয়ে বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। সেই সঙ্গে তারা প্রধান শিক্ষককে মারপিট করতে যান। এ সময় আমি ঘটনাটি শুনে বিদ্যালয়ে এসে তাৎক্ষনিক মোবাইলে বিষয়টি সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানাই। পরে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা নৃপেন্দ্র নাথ সরকার ঘটনাস্থলে এসে ১০দিনের মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রত্যাহারের আশ^াস দিলে তারা শান্ত হন।
তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাস ইতোপূর্বে রামকান্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে থাকাকালে এবং অন্যান্য সময়ে যতগুলো বিদ্যালয়ে চাকুরী করেছেন, সেসব বিদ্যালয়েও তিনি ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ নানা রকম অঘটন ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নৃপেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, বার্থা খানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাস ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগে গতকাল সকালে অভিভাবক ও স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে তাকে স্কুলে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে আমি ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল কাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের কাছে আগামী দশ দিনের মধ্যে ওই শিক্ষককে প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাস বলেন, আমি নীতি নৈতিকতার সঙ্গে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। এই ধরণের কোনো কর্মকান্ডের সঙ্গে আমি জড়িত নই।