॥কবির হোসেন॥ আগামী ২৫শে জানুয়ারী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৯বছর পুনর্মিলনী উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে গতকাল ১৬ই জানুয়ারী দুপুর ২টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে প্রস্তুতি ও বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম। সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী ইরাদত আলী এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি রাকিব হাসান সোহেল।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ রাজীবের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার এবং রাজবাড়ী পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি শাওন মিয়া টাইসন। সভা পরিচালনা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এরশাদ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ গঠন করেছিলেন এবং সেই থেকেই ছাত্রলীগ গ্রহণযোগ্য সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তী ছাত্রলীগের সদস্যরা ছাত্রলীগের ভূমিকাকে ম্লান করে দিচ্ছিল কিন্তু আস্তে আস্তে ছাত্রলীগ পুনর্গঠিত হয়ে স্থিতিশীলভাবে কাজ করে চলেছে। টেন্ডারবাজী, মাস্তানী, চাঁদাবাজী ছাত্রলীগ থেকে দূর করতে হবে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের কথা উল্লেখ করে বলেন, সূর্যসেন হলে ১০-১৫জন খারাপ ছাত্র ছিল আর সব ছিল ভাল। ছাত্রলীগের খারাপ সদস্যরা ঢাকা ভার্সিটির ভাবমূর্তি খারাপ করে ফেলে। এখনও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেকেই আছে যারা আওয়ামী লীগের আদর্শ গ্রহণ করে না এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নেই। কিন্তু তারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভিন্ন পদে অবস্থান করছে। যদি আমরা সাচ্চা ছাত্রলীগ গঠন করতে চাই, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করতে চাই তাহলে ছাত্রলীগকে সেইভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আপনারা জানেন রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। রাজীব ও এরশাদ পরীক্ষিত নেতা, তাদেরকে সুপারিশ করতে হবে কেন? আমি আগে ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ছিলাম। পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এমপি হয়েছি। আজকাল সবাই চায় কাজ না করে নেতা হতে। কিন্তু নেতা হলে নিজেকে নেতা হিসেবে তৈরী করতে হয়, কর্মীদের আস্থা অর্জন করতে হয়। শর্টকাট নেতা বেশিদিন টেকে না। যারা হাইব্রিড নেতা তারা বেশী দিন টেকে না। আমার বাবা নেতা ছিল না, আমাকে সংগ্রাম করে এ মর্যাদায় আসতে হয়েছে। আমরা কাজ করে তৈরী হয়েছি। তাই তোমাদেরকে তৈরী হতে হবে। দল করলেই নেতা হওয়া যায় না। ছাত্রলীগ যারা করে তারা অধিকাংশই ভাল। কিন্তু এদের মধ্যে ৫% মাদকের সাথে জড়িত। এদের দ্বারা দল ও সমাজের ক্ষতি হবে। তাই এদের সংশোধনের জন্য ছাত্রলীগ নেতাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ছাত্রলীগকে বলে দিয়েছি কোন চাঁদা নেবে না, কোন অন্যায় কাজে অংশগ্রহণ করবে না। তাই ছাত্রলীগের এখন কোন দুর্নাম নেই। সামনে ঢাকায় ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী হবে। এখান থেকে যারা যাবে, তাদেরকে সহযোগিতা করব। আমাদের প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি করতে হবে। তা নাহলে দলের কর্মী বাড়বে না। আমরা আশা করি ছাত্রলীগ তার আগের ঐতিহ্য ফিরে পাবে। ছাত্রলীগ শক্তিশালী হলে ছাত্রলীগের সামনে কোন সংগঠন দাঁড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই।
সম্মানিত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী সংগঠন হচ্ছে ছাত্রলীগ। তাই ছাত্রলীগের কর্মী সংখ্যা বাড়াতে প্রতি মাসে একটি করে বর্ধিত সভা করতে হবে। আমাদের ডান হাত হচ্ছে ছাত্রলীগ। আমাদের সকল ইউনিট যদি শক্তিশালী হয় তাহলে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠব। ইউনিয়ন, উপজেলায়, স্কুলে-মাদ্রাসায় কমিটি করতে হবে। প্রতি মাসে ছাত্রলীগের মিটিং করতে হবে। এতে সংগঠন আরও গতিশীল হবে।
তিনি আরো বলেন, তোমরা ছাত্রলীগের সদস্য। তাই তোমাদের প্রথমে পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে রাজনীতি নয়, আগে পড়াশোনা পড়ে রাজনীতি। দেশে ষড়যন্ত্র চলছে। বাদ রয়েছে শুধু শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। আশা করি আমরা সব ষড়যন্ত্র কাটিয়ে উঠব। আমরা চাই ২০১৭ সালের মধ্যে ছাত্রলীগ আরও শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হোক।
সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস.এম শওকত হোসেন, মাহফুজুল হক জাকির, মোঃ তারিকুল ইসলাম রানা, আরিফ মাতব্বর, ইমরান হোসেন তপু ও শাহজালাল, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরিদ হাসান ওদুদ, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা মাহমুদ হেনা মুন্সি, জেলা ছাত্রলীগ নেতা নাহিদুল আলম রাজু, সোহেল মন্ডল, আঃ রশিদ খান, নজরুল ইসলাম রুবেল, মোক্তাদির হাসান সোহান, আলমগীর হোসেন আলম, ফয়সাল, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সামসুল সালেহীন অপু, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, রাজবাড়ী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল পাঠান, পাংশা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিদুল ইসলাম মারুফ, সাধারণ সম্পাদক তাজবিরুল হাসান সিসিল, বালিয়াকান্দি উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মন্টু, কালুখালী উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম সুমন, যুগ্ম-আহবায়ক সোহেল রানা, গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাজিমুল ইসলাম বৃটেনসহ ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।