শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

নতুন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদের বর্ণিল ক্যারিয়ার

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল(কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ, বিজিবিএম, পিবিজিএম, বিজিবিএমএস, পিএসসি, জি’কে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ করা হয়েছে।
গত ১৮ই জুন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোঃ আবু বকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ২৫শে জুন, বিকেল থেকে এই নিয়োগ আদেশ কার্যকর হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বর্তমান প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক আগামী ২৫শে জুন তারিখে তার নির্ধারিত মেয়াদকাল পূর্ণ করার পর অবসরে যাবেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এশিয়া মহাদেশের অন্যতম সেরা সেনাবাহিনী। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি এই বাহিনী আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিধানে এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অভূতপূর্ব অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছে এবং হচ্ছে। এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্যে অসাধারণ নেতৃত্বগুণ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন যোগ্যতা-দক্ষতা, সুনির্দিষ্ট অপারেশনাল/কমান্ড অভিজ্ঞতা, ডায়নামিজম এবং সর্বোপরি সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বস্ততা ইত্যাদি বিষয়কে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ বর্ণিত সকল গুণ ও দক্ষতার নিরিখে উত্তীর্ণ একজন চৌকষ সামরিক অফিসার। তিনি ১৯৬১ সালে চাঁদপুর জেলার মতলবের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা-মরহুম আব্দুল ওয়াদুদ আহমেদ। মাতা-রেনুজা বেগম। পিতা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ তার সামরিক বাহিনীর ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মেধাবী অফিসার হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত ছিলেন।
তিনি ৮ম বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের(৮ম বিএমএ লং কোর্স) ক্যাডেট হিসেবে ১৯৮৩ সালের ১০ই জুন তারিখে সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশনপ্রাপ্ত হন। তার বেসিক কোর্সের অফিসারগণের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে মেধাবী ও পরিশ্রমী। ফলে সামরিক জীবনের শুরুতেই তিনি তার বেসিক কোর্সে প্রথম স্থান অধিকার করে নিজেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম সারির একজন অফিসার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। বেসিক কোর্সে ভালো ফলাফল অর্জনের কারণে তাকে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সার্জেন্সী অপারেশনে নিয়োজিত আর্টিলারি ব্রিগেডের জিএসও-৩ (অপারেশন) দায়িত্বে নিয়োগ প্রদান করা হয়। শুধুমাত্র বেসিক কোর্সেই নয়, পরবর্তীতে তার কর্তৃক সম্পন্ন করা সকল কোর্সেই তিনি উচ্চমানের ফলাফল অর্জন করেন। এই কোর্স সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্কুল অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স(এসএমআই) তে অনুষ্ঠিত বেসিক ইন্টেলিজেন্স কোর্স এবং মিলিটারি সাইন্স কোর্স। বেসিক ইন্টেলিজেন্স কোর্সে এবং মিলিটারি সাইন্স কোর্সে তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ ১৯৮৯-১৯৯০ সালে আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল, হালিশহর, চট্টগ্রাম হতে অফিসার্স গানারী স্টাফ কোর্স করার পর তাকে ১৯৯২-১৯৯৩ সালে ভারতের স্কুল অফ আর্টিলারি, দেওলালীতে প্রেরণ করা হয় ‘লং গানারী স্টাফ কোর্স(ফিল্ড)’ করার জন্যে। উক্ত কোর্সে তিনি অসাধারণ ফলাফল অর্জন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বিদেশে উজ্জ্বল করেন। অতঃপর তিনি মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ থেকে ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে সাফল্যের সঙ্গে আর্মি ষ্টাফ কোর্স-১৯ সম্পন্ন করেন।
অসাধারণ স্টাফ অভিজ্ঞতার অধিকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ। একটি অপারেশনাল ডিভিশনের অধীনে আর্টিলারি ব্রিগেডের গ্রেড-৩ স্টাফ অফিসারই নয় শুধু, তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর(বিএম) হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘদিন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের গ্রেড-২ স্টাফ, বেতন ও ভাতা পরিদপ্তরের গ্রেড-১ স্টাফ এবং বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউ এম জি) হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন।
উল্লেখ্য, চলতি ২০১৮ সালের ৯ই জানুয়ারী তারিখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল(কিউএমজি) হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
জেনারেল আজিজের কমান্ড অভিজ্ঞতাও অসামান্য। ২০১২ সালের ৭ই মে তারিখে তিনি মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। একই বছর ৫ই ডিসেম্বর তারিখে পুনর্গঠিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময়কালে তিনি এই বাহিনীর পুনর্গঠন নিষ্ঠার সাথে সুচারুরূপে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) বর্তমানে দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার মধ্যে আধুনিক ও শ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী সমূহের অন্যতম। এই বাহিনী বর্ডারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মাদকপাচার, চোরাচালানী ইত্যাদি প্রতিরোধ করে দেশের অর্থনীতিকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অবদান রাখতে সমর্থ হচ্ছে। বিজিবি’র মহাপরিচালক হিসেবে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে তাঁকে বিজিবিএম, পিবিজিএম এবং বিজিবিএমএস এই তিনটি পদকে ভূষিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অপারেশনে অসাধারণ কর্মদক্ষতা, দুরদর্শিতা, অসম সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক’ বা ‘বিজিবিএম’ এ ভূষিত করা হয়ে থাকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক। পিবিজিএম বা ‘রাষ্ট্রপতি বর্ডারগার্ড পদক’ প্রদান করা হয়ে থাকে বীরত্বপূর্ণ/কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি সরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক। এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-সেবা পদক প্রদান করা হয়ে থাকে অতুলনীয় সেবা বা সার্ভিস প্রদানের জন্যে। এটাও একটা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। জেনারেল আজিজ এই সবগুলো পদকই অর্জন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর তৎকালীন মহাপরিচালক থেকে পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (ARTDOC)-এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং(জিওসি) হিসেবে নিয়োজিত হন। এই ডিভিশন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সকল জরিপ ও রিসার্চ সম্পন্ন করে থাকে এবং এই প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ মোতাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষন দর্শন ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ তার সুদীর্ঘ কর্ম জীবনে একটি আর্টিলারি ইউনিটের অধিনায়ক, একটি বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, একটি বিজিবি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেডসহ মোট দুটি আর্টিলারি ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে এবং একটি পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার হিসেবে অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে কমান্ড সম্পন্ন করেছেন।
তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে ইরাক-কুয়েতে সামরিক পর্যবেক্ষক এবং ২০০৫-২০০৬ সালে সুদানে জাতিসংঘ মিশনে ফোর্স কমান্ডার এর সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রশিক্ষক হিসেবেও লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুলে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘদিন। এছাড়া স্কুল অফ মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স তথা এসএমআইয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ মোহাম্মদপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৭৫ সালে এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ(পাস) সম্পন্ন করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টর অব ডিফেন্স স্টাডিজ(এমডিএস) সম্পন্ন করেন। পরিশেষে তিনি ২০০৮ সালে এমএসসি(টেকনিক্যাল) এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইন বাংলাদেশ(AIUB) থেকে মাস্টার্স ইন বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন(এমবিএ) সম্পন্ন করেন।
বিদ্যার প্রতি প্রবলভাবে অনুরাগী লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ তার বর্তমান ব্যস্ত সময়েও পড়াশুনায় নিজেকে ব্যপৃত রেখেছেন। ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস(BUP) এ তার পিএইচডি রিসার্চ শুরু করেন যা এখনো চলমান রয়েছে।
তার স্ত্রী বেগম দিলশাদ নাহার আজিজ একজন গৃহিনী। তার তিন পুত্র সন্তান আছে। খেলাধুলা প্রিয় এই জেনারেল গলফ খেলায় বিশেষ উৎসাহী ও পারদর্শী। অবসরে তিনি বই পড়েন।
জেনারেল আজিজ তার নেতৃত্বগুণ, কর্মদক্ষতা, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন ক্ষমতা এবং অসাধারণ মানবিকতা দিয়ে সেনাবাহিনী তথা বাংলাদেশকে উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন বলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল পদবীর সদস্যগণ মত পোষণ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!