শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

গোয়ালন্দে গৃহবধুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৭

॥আবুল হোসেন/হেলাল মাহমুদ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে বন্যা খাতুন(২৫) নামের এক গৃহবধুকে স্বামী ও তার পরিবার হাত-পা বেঁেধ মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
সে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বদিউজ্জামান বেপারী পাড়ায় স্থানীয় রহিচ ফকিরের স্ত্রী ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের নবগ্রাম গ্রামের মৃত আবুল হাসেম ওরফে নান্নু মিয়ার মেয়ে। তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গৃহবধুর পরিবার ও এলাকার লোকজন জানান, গত শুক্রবার সকালে শ্বশুড় আবুল হোসেন ফকীর গোসলের জন্য বন্যার কাছে মগ চায়। মগ দিতে দেরী হওয়ায় স্বামী রহিচ কৈফিয়ত চান। এনিয়ে এক পর্যায়ে স্বামী রহিচ ফকীর, শ্বশুড় আবুল হোসেন ফকীর ও ননদ টুম্পা খাতুন মিলে বন্যাকে ঘরে আটকে হাত-পা রশি দিয়ে বেধে বেদম মারপিট করতে থাকে। এ সময় সে বাচাঁও বলে চিৎকার করতে থাকলে রাস্তার পাশেই থাকা গুল আহম্মদ পাট কোম্পানীর এজেন্সির ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে উদ্ধার করে।
পাট কোম্পানীর কর্মচারী তোফায়েল হোসেন জানান, বাঁচাও বলে চিৎকার শুনে আমরা এগিয়ে গিয়ে দেখি বাইরে থেকে গেট আটকানো। দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের দরজা খুলে দেখি তার হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা। এমনকি তার মুখও ওড়না দিয়ে আটকে রেখেছে। পরে সবাই মিলে তাকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করি। যথা সময়ে উপস্থিত না হলে হয়তো তাকে মেরে ফেলতো। হাত বাঁধা অবস্থায় দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
হাত-পায়ে রশি নিয়ে পাগলের মতো রাস্তা দিয়ে দৌড়ে সে গোয়ালন্দ ঘাট থানার আসতে গিয়ে গোয়ালন্দ বাজার বড় মসজিদের কাছে পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে এক বাড়িতে নিয়ে প্রাথমিক সেবা দিয়ে থানায় যেতে চাইলে সহযোগিতা করে। এমন অবস্থায় দেখে পুলিশ তাকে চিকিৎসা নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। পরে সংবাদ পেয়ে বন্যার বড় ভাই রেজাউল হক সাগর গোয়ালন্দ বাজারে এসে তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।
রেজাউল হক সাগর অভিযোগ করেন, ২০০৩ সালে রহিচের সাথে বন্যার বিয়ে দেন। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশ কিছু গহনা দেন। বিয়ের দেড় বছর পর তাদের কোলে এক কন্যার সন্তান জন্ম নেয়। কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার পর থেকে মাঝেমধ্যে টাকার জন্য তাকে মারধর করতে থাকে। সম্প্রতি রহিচ অনেক রাত করে বাড়ি ফেরায় ও টাকা পয়সার জন্য মারধর বেড়ে যায়। গত শুক্রবার সকালে রহিচসহ তার বাবা-মা ও ছোট বোন মিলে বন্যার হাত-পা বেধে বেদম মারপিট করে।
বন্যার চাচা পান্নু মিয়া বলেন, যেহেতু বন্যার বাবা না থাকায় আমরাই দেখভাল করছি। বন্যা রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করে ফরিদপুর রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মার্স্টাসে ভর্তি হলে শ্বশুড় বাড়ির লোকজন মেনে নেয়নি। আমরা রাজবাড়ীর আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে রহিচ ফকীর বলেন, বন্যা আমার বাবা-মাকে কখনই মেনে নেয়নি। এছাড়া তার সাথে এক ছেলের অবৈধ পরকীয়া সর্ম্পক গড়ে উঠে। বিষয়টি জানার পর থেকেই সংসারে অশান্তি নেমে আসে। বিষয়টি তার পরিবারকে জানালেও কোন ব্যবস্থা নেইনি। উল্টো আমাকে মারধর করে শুক্রবার সকালে সে ব্যবহৃত গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুশীল কুমার রায় গতকাল শনিবার বলেন, গৃহবধুর সারা শরীরে আঘাত ও ফোলা-জখমের চিহৃ রয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ্য হতে আরো তিন-চার দিন লাগবে। তবে সে বিপদ মুক্ত রয়েছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মির্জা মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, গৃহবধুকে দেখে আমরা আগে চিকিৎসা নিয়ে আসার পরামর্শ দেই। এরপর সে আর আসেনি। থানায় এসে অভিযোগ দিলে অবশ্যই মামলা নেওয়া হবে। এর আগেই স্বামী রহিচ ফকীর থানায় গৃহবধুর নামে অভিযোগ দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!