॥মোক্তার হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউপির শহীদ খবিরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের নাশকতা ঘটনার ১০দিনেও ক্লু উদঘাটন হয়নি। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল জলিল ও বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী রনজুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানাযায়, গত ২রা জানুয়ারী রাতে বাহাদুরপুর ইউপির শহীদ খবিরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের তালা ভেঙ্গে দুর্বৃত্ত দল আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-কাগজপত্র ও চেয়ার-টেবিল পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল জলিল ঘটনার ২দিন পর ৪ঠা জানুয়ারী নাশকতায় অফিস কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-কাগজপত্র ও চেয়ার-টেবিল পুড়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধনের সাথে ৪০হাজার টাকা পুড়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করেন এবং নাশকতার ঘটনায় পাংশা থানায় জিডি করেন। জিডি নং ১২৮।
সুত্র মতে, বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে নাশকতার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত ৪ঠা জানুয়ারী সকালে বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর শাকিলের সভাপতিত্বে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, সাবেক কমিটি, শিক্ষকমন্ডলী, অভিভাবক ও এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাহাদুরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম(মহন মুন্সী), বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবুল কাশেম, বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও বাহাদুরপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইমান আলী, শহীদ খবিরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক (হক সাহেব), বাহাদুরপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শওকত আলী মোল্লা, বাহাদুরপুর ইউপির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, পাংশা উপজেলা শিক্ষা কল্যাণ ট্রাষ্টের নেতৃবৃন্দ, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বর্তমান ও সাবেক কমিটির সদস্যবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশারবহু লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ২রা জানুয়ারী ভোর রাতে শহীদ খবিরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে নাশকতা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ, সেই সাথে ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জাননো হয়।
সভায় উপস্থিত লোকজনের সর্ব সম্মতিক্রমে বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও বাহাদুরপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইমান আলীকে আহবায়ক, বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবুল কাশেম ও সাবেক চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম (মহন মুন্সী) কে সদস্য করে ৩সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ওইদিনই বিকেল ৫টার মধ্যে নাশকতার সাথে জড়িতদের চিহ্নিতকরণসহ নাশকতার নেপথ্য উদঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটির নিকট বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও ম্যানেজিং কমিটির সকলের কাছে মন্তব্য প্রতিবেদন আহবান করা হয়। সে আলোকে তদন্ত কমিটির কাছে ২৪জন তাদের মন্তব্য প্রতিবেদন জমা দেন।
গত বুধবার রাত ৮টার দিকে তদন্ত কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর শাকিলের নিকট তার অফিস কক্ষে শহীদ খবিরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে নাশকতার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর শাকিল গতকাল ১২ই জানুয়ারী সকাল ১১টার দিকে শহীদ খবিরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল জলিল ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ এনামুল হক(হক সাহের) এর নিকট ওই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী থাকা সত্বেও এর আগেও বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা অফিসের কাগজপত্র তছনছ করে। ওই ঘটনায় অজ্ঞাত কারণে প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল কোনও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকই অভিমত জানান, প্রধান শিক্ষক হিসেবে আব্দুল জলিলের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। তার দায়িত্ব কর্তব্যবোধ ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে বিদ্যালয়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে পরস্পর সুসম্পর্কের অভাব রয়েছে। শিক্ষকবৃন্দ ম্যানিজিং কমিটির আস্থা অর্জনেও পুরোপুরি সফল নয়। বিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্রের চলাফেরা ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী। বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী রনজু নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে অসচেতন। এসব কারণে বিদ্যালয় পরিচালনায় নানা সংকট ও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।