ভারতীয় সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত একটি এমআই-৪ হেলিকপ্টার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে এবং দুটি পিটি-৭৬ ট্যাংক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গতকাল ২৫শে এপ্রিল স্থায়ীভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারে গতকাল বুধবার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার মান্যবর হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের এ স্মারক হস্তান্তর করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল ষ্টাফ লেঃ জেনারেল মোঃ নাজিম উদ্দীন ট্যাংক ২টি এবং বিমান বাহিনীর পক্ষে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান(প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল এম আবুল বাশার হেলিকপ্টারটি গ্রহণ করেন।
মান্যবর হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, “আমরা আপনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার সুযোগ পেয়ে গর্বিত। স্বাধীনতা সংগ্রাম ভারত-বাংলাদেশের সৈন্য ও জনগনের সাহস, বীরত্ব, আত্মত্যাগ ও গৌরবের সাক্ষ্য। এই উত্তরাধিকার এবং চেতনা আগামী দিনগুলোতে দুই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রানিত করবে।”
পিটি-৭৬ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আর্মার্ড রেজিমেন্টের হালকা ধরনের উভচর ট্যাংক। যুদ্ধের সময় নদী ও জলাশয় পারাপারে এই ট্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিল। গরীবপুরের বিখ্যাত যুদ্ধে এই ট্যাংগুলির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। যে যুদ্ধে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এম ৩৪ শ্যাফে ট্যাংকসমৃদ্ধ পাকিস্তানী বাহিনীর একটি বড় দল পরাজিত হয়েছিল। যুদ্ধের সময় উত্তারাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিমাঞ্চলসমূহে পাকিস্তানী বাহিনীকে পিছু হটাতে এই ট্যাংকগুলি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছিল।
এম আই-৪ হেলিকপ্টর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর পরিবহন হেলিকপ্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। পূর্বাঞ্চলে যৌথ বাহিনী কর্তৃক আকাশপথে পরিচালিত অপারেশনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল এটি। দ্রুত সিলেট দখল করতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ৪/৫ গুর্খা ব্যাটালিয়নটি এই অপারেশনের জন্য সুরমা নদীর তীরে সিলেটের উপকণ্ঠে অবতরণ করেছিল। আবার এই হেলিকপ্টরযোগেই ১৯৭১ সালের ৯ই ডিসেম্বর প্রমত্তা মেঘনা নদীর চড়ে অবতরণ করেছিল ৩১১ পদাতিক ব্রিগেড। মেঘনা পাড়ি দিয়ে টানা ৩৬ ঘন্টায় দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর ১১০ বার হামলা চালানো হয়েছিল ওই হেলিকপ্টার থেকে। যৌথ বাহিনীর সেই অভিযান মেঘনা হেলিব্রিজ নামে পরিচিত।
উল্লেখ্য যে, গত ২২শে অক্টোবর-২০১৭ তারিখ ঢাকায় গণভবনে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের বিমান মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নিকট ১৯৭১ সনের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারকের একটি তালিকা হস্তান্তর করেন। তারই ধারাবাহিকতায় উক্ত হেলিকপ্টার ও ট্যাংক দুটি যথাক্রমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়।
এমআই-৪ হেলিকপ্টারটি এবং পিটি-৭৬ ট্যাংক দুটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশেষ অবদানের স্বাক্ষর বহন করে। এমআই-৪ হেলিকপ্টার এবং পিটি-৭৬ ট্যাংক দুটির হস্তান্তর দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর বিদ্যমান সুসম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায় -আইএসপিআর।