॥আবুল হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে আসা জেলেরা অন্যান্য মাছের সাথে জাটকা ইলিশ শিকার করছে।
সরকারী সুযোগ সুবিধার আওতায় না আসায় তারা মাছ শিকার করছে। তবে মৎস্য বিভাগের দাবী, জনবল সংকটের কারণে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও জেলেদের সরকারী কর্মসূচীর আওতায় আনতে আবেদন করা হয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সুত্র জানায়, একজন সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাসহ একজন মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা, ক্ষেত্র সহকারী, অফিস সহকারী ও পিয়ন থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হারুন অর-রশিদ ও অফিস সহকারী রিয়াজুল ইসলাম ছাড়া নিয়মিত কেউ নেই। সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা থাকলেও তিনি নিয়মিত আসেন না। ক্ষেত্র সহকারী কৃষ্ণ লাল দাস সরকারী প্রশিক্ষণে তিন মাস ধরে অন্যত্র আছেন। প্রায় দেড় বছর ধরে অফিস পিয়ন কোরবান আলী অবসর আছেন। মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শামীমা আক্তার ডেপুটিশনে রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ে কর্মরত আছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীর উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের অধিকাংশ জেলে নৌকায় কারেন্ট জালসহ অন্যান্য জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে। দেশীয় প্রজাতির অন্যান্য মাছের সাথে হরহামেশা জাটকা নিধন করছে। এসব মাছ স্থানীয় বাজারসহ আশপাশের বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। আলাপকালে কয়েক জেলে জানান, সরকারীভাবে কোন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়না। প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ সুবিধা পেলে হয়তো তারা সহজে নদীতে নামতো না।
পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় জেলে চান মিয়া, শাহজাহান শেখ জানান, মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে নামা নিষিদ্ধ ছিল। তখন সরকারীভাবে জেলেদের জন্য কিছুই করা হয়নি। অক্টোবর মাসে অভিযান শেষ না হতেই ১লা নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান। এভাবে একের পর এক অভিযান চলবে। কিন্তু জেলেরা কি খেয়ে বেঁচে থাকবে তার কোন ব্যবস্থা নাই।
পাবনা থেকে আসা জেলে ধিরেন হালদার বলেন, কয়দিন ধরে নদীতে আইছি। কিছু মাছ পাইছিলেম। মাঝি মধ্যে মাছ লিইয়া যায়, আবার জাল লিয়া যায়। শুনেছি জাটকা মারা লিষেধ। মাছ ধরতি গেলে দুই-চারটি জাটকা আসবোই।
মৎস্য সংরক্ষণ ১৯৫০ সালের আইনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ জাটকা শিকার করলে প্রথম পর্যায়ে অপরাধের জন্য তাকে ৬মাস থেকে ১বছরের জেল। দ্বিতীয় বার একই অপরাধ করলে ২বছরের জেল বা ৫হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ্বন্ডে দ্বন্ডিত হবেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হারুন অর-রশিদ বলেন, মূলত লোকবলের অভাবে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান ঠিকমতো পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছেনা। আমিসহ একজন সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী আছেন। কিন্তু সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা গত ২রা জানুয়ারী যোগদানের পর বিনা ছুটিতে ২৯ ও ৩০ জানুয়ারী এবং ১লা ফেব্রুয়ারী থেকে টানা ৩৬দিন ৭ই মার্চ পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকায় তাকে দুই দফা কারণ দর্শাতে বললেও জবাব দেননি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু নাসার উদ্দিন বলেন, জনবল সংকটের অভিযোগ ঠিকনা, আমরাতো আছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা শিকারের সুযোগ নেই। খবর পাওয়া মাত্র ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অভিযান চালানো হবে।