রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসস্থ বাংলাদেশ ইস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং(বিপসট) এ গতকাল ২৬শে ফেব্রুয়ারী ‘অনুশীলন শান্তিদূত-৪’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে অনুশীলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল(অবঃ) তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
অনুশীলন শান্তিদুত-৪ তিনটি ভাগে একই সময়ে পরিচালিত হবে; ফিল্ড ট্রেনিং ইভেন্ট(এফটিই), স্টাফ ট্রেনিং ইভেন্ট(এসটিই) এবং ক্রিটিক্যাল এনাবেলার ক্যাপাবিলিটি এনহান্সমেন্ট(২সিই)।
এছাড়াও আজ ২৭শে ফেব্রুয়ারী দিনব্যাপী একটি স্ট্র্যাটেজিক লেভেল সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারের বিষয়বস্তু হলো ‘বৈচিত্র্যময় শান্তিরক্ষা মিশনের চ্যালেঞ্জ ও সুবিধা’। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ২২টি দেশের মোট ১৩১৯ জন অংশগ্রহণ করছেন। অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে ঃ অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ফিজি, ঘানা, যুক্তরাজ্য, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, কিরগিস্তান, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, পেরু, ফিলিপাইন, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সিয়েরালিওন, দক্ষিন কোরিয়া, শ্রীলংকা, ইউএসএ এবং ভিয়েতনাম।
পরবর্তীতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যানডেট ‘‘বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা’’ সংক্রান্ত একটি মহড়া বিপসটে অনুষ্ঠিত হয়। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাস্তবধর্মী প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে মহড়া অংশগ্রহনকারী সামরিক, পুলিশ ও বেসামরিক সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেয়া। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পেশাগত ও কারিগরী দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশিবিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ইউনিট পর্যায়ে কর্মকান্ডের উপর সার্বিক প্রশিক্ষণ প্রদানই ছিল এ মহড়ার উদ্দেশ্য। গ্লোবাল পীস অপারেশন ইনিশিয়েটিভ এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশ ও বিদেশের উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক ব্যাক্তিবর্গ বিপসটের প্রশিক্ষণ মানের প্রশংসা করেন।
অনুশীলন শান্তিদূত-৪ এর মাধ্যমে অংশগ্রহনকারী দেশ সমূহের মধ্যে আঞ্চলিক বন্ধন, নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দক্ষতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। ফিল্ড ট্রেনিং ইভেন্ট প্রশিক্ষনে বিভিন্ন ধরনের লেইন ট্রেনিং এর পাশাপাশি শান্তি রক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাস্তব ধর্মী পরিস্থিতির আলোকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী শীর্ষদেশ সমূহের মধ্যে অন্যতম। বিপসট এর মাধ্যমে প্রদানকৃত উন্নত প্রশিক্ষণ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ভূমিকা পালনে অন্যতম সহায়ক বলে প্রতীয়মান হয়। অনুশীলন শান্তিদূত-৪ এর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক গুন বৃদ্ধি করবে।
‘অনুশীলন শান্তিদূত-৪’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের উপর পরিচালিত একটি বহুজাতিক অনুশীলন, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ইউ এস প্যাসিফিক কমান্ড (ইউএসপ্যাকম) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত গ্লোবাল পিস অপারেশনস্ ইনিশিয়েটিভ (জিপিওআই) এর পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের উপর পরিচালিত বহুজাতিক অনুশীলন। অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পেশাগত ও কারিগরী দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ইউনিট পর্যায়ে অত্যাবশ্যক কর্মকান্ডের উপর সার্বিক প্রশিক্ষণ প্রদান এ অনুশীলনের উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, এই অনুশীলনটি ইউ এস প্যাসিফিক কমান্ড দ্বারা পরিচালিত মাল্টি ন্যাশনাল পিস কিপিং ইভেন্ট(গচঊ) যা প্রতিবছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত হচ্ছে এবং বিপসটে ২০০২, ২০০৮ ও ২০১২ সালে একই ধরনের অনুশীলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউএন মিশন এলাকায় গমন পূর্ব প্রশিক্ষণ, পারস্পরিক যোগাযোগ ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মূল বিষয়গুলোর উপর ধারনা প্রদান এ অনুশীলনের অন্যতম বিষয়বস্তু।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার সহ দেশ ও বিদেশের উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দু’সপ্তাহব্যাপী এ অনুশীলন আগামী ১২ই মার্চ সমাপ্ত হবে -আইএসপিআর।