॥মোক্তার হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাসপুরস্থ ড.কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের দু’দিন ব্যাপী রজত জয়ন্তী উৎসব-২০১৮ গতকাল ২৪শে ফেব্রুয়ারী সমাপ্ত হয়েছে।
ড.কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের মতিহার চত্বরে কলেজ জিবির সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড.এম.এ মাজেদের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা, রাজবাড়ী-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম, ডিডিসি লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও দাতা ইঞ্জিনিয়ার একেএম রফিক উদ্দিন, রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, ড.কাজী মোতাহার হোসেনের নাতনী প্রফেসর নাজমা হক ও ড.কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিকাশ চন্দ্র বসু বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড.কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল আজিজ।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান জ্ঞানতাপস ড.কাজী মোতাহার হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ড.কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন নানা গুণে গুণান্বিত। আজীবন তিনি শিক্ষা, সাহিত্য ও বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করেছেন। সমাজ এবং মানুষের কল্যাণে তিনি নিবেদিত ছিলেন। জাতীয় অধ্যাপক ড.কাজী মোতাহার হোসেন সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেন একজন আত্মভোলা মানুষ ছিলেন। ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান আহরণ এবং নৈতিক বুদ্ধিতে বলিয়ান হওয়ার গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামান বলেন, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান আহরণ করা, মানুষ হওয়া ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করা। তিনি বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার্থী নয় শিক্ষার্থী হিসেবে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার পরামর্শ প্রদান করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আমি বিচলিত না হয়ে পারি না। ছেলে-মেয়েদের জিপিএ-৫ এর জন্য স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরতে না ফিরতেই কোচিং-প্রাইভেটে যেতে হয়। লেখাপড়ার চাপে শৈশব থেকেই জীবন থেকে তাদের বিনোদন ও আনন্দ হারিয়ে যায়। অভিভাবকদের এই বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে উপলব্ধি করা উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা বলেন, অত্র এলাকায় বহু জ্ঞানী মানুষের জন্ম হয়েছে। তাদের জন্য আমরা গর্ব করি। তিনি বলেন, আমি পরিসংখ্যান করে জেনেছি-মেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। তারা রিজাল্টও ভালো করছে। এটি সমাজের ইতিবাচক দিক।
মোহাম্মদ আবু হেনা বলেন, শিক্ষার হার বেড়েছে, কিন্তু মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। মুখস্ত বিদ্যা দিয়ে আলোকিত মানুষ হওয়া যায় না। তাই সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ প্রকাশমান হলেই দেশ পরিচিত হয়। দেশ ও সমাজের উন্নয়ন হয়।
বিশেষ অতিথি রাজবাড়ী-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম ড.কাজী মোতাহার হোসেন স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণসহ কলেজের সার্বিক উন্নয়নে প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, গুড টিচিং ও গুড লার্নিং এর সমন্বয় ঘটাতে হবে। তা হলেই মানসম্মত শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ঘটবে।
বিশেষ অতিথি ইঞ্জিনিয়ার একেএম রফিক উদ্দিন জ্ঞানতাপস ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন দাবাড়– ড.কাজী মোতাহার হোসেনের পরিবারের সাথে ঘনিষ্টতার স্মৃতিচারণ করেন এবং তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে কলেজের ১টি অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন তিনি। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন নয়ন কুমার সাহা ও জেসমিন আক্তার। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সহধর্মিনী সিদ্দিকা জামান, ড.কাজী মোতাহার হোসেনের পরিবারের সদস্যবৃন্দ, পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, পাংশা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন, হাবাসপুর ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল আলিম, খান মোঃ আব্দুল হাই, এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ, আমিনুল ইসলাম পাকুসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।