বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত অনুশীলন শান্তিদূত-৪ উপলক্ষে সাংবাদিক সম্মেলন গতকাল ২৪শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা সেনানিবাসস্থ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এ অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন্স ট্রেনিং (বিপসট)-এর প্রধান প্রশিক্ষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ তোফায়েল আহমেদ, পিএসসি বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবার দেন। এ সময় পরিচালক আইএসপিআর, মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর ক্যাসান্ড্রা গেসেকি (ঈড়-ফরৎবপঃড়ৎ, এষড়নধষ চবধপব ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ ঙঢ়বৎধঃরড়হ রহরঃরধঃরাব (এচঙও) এবং উর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্র্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
‘অনুশীলন শান্তিদূত-৪’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের উপর পরিচালিত একটি বহুজাতিক অনুশীলন, যা আগামী ২৬শে ফেব্রুয়াীর থেকে ১২ই মার্চ পর্যন্ত রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অবস্থিত বাংলাদেশ ইস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট)-এ অনুষ্ঠিত হবে। যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ইউ এস প্যাসিফিক কমান্ড (ইউএসপ্যাকম) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত গ্লোবাল পিস অপারেশনস্ ইনিশিয়েটিভ(জিপিওআই) এর পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের উপর পরিচালিত বহুজাতিক অনুশীলন।
শান্তিদূত শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘শান্তির বার্তাবাহক’। অংশগ্রহণকারী দেশ সমূহের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পেশাগত ও কারিগরী দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ইউনিট পর্যায়ে অত্যাবশ্যক কর্মকান্ডের উপর সার্বিক প্রশিক্ষণ প্রদান এ অনুশীলনের উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, এই অনুশীলনটি ইউ এস প্যাসিফিক কমান্ড দ্বারা পরিচালিত মাল্টি ন্যাশনাল পিস কিপিং ইভেন্ট(গচঊ) যা প্রতি বছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত হচ্ছে এবং বিপসটে ২০০২, ২০০৮ ও ২০১২ সালে একই ধরনের অনুশীলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের কৌশলগত এবং কারিগরী দক্ষতাবৃদ্ধি করাই শান্তিদূত-৪ এর উদ্দেশ্য। ইউএন মিশন এলাকায় গমনপূর্ব প্রশিক্ষণ, পারস্পরিক যোগাযোগ ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মূলবিষয় গুলোর উপর ধারনা প্রদান এ অনুশীলনের অন্যতম বিষয়বস্তু।
অনুশীলন শান্তিদুত-৪ তিনটি ভাগে একই সময়ে পরিচালিত হবে; ফিল্ড ট্রেনিং ইভেন্ট(এফটিই), স্টাফ ট্রেনিং ইভেন্ট(এসটিই) এবং ক্রিটিক্যাল এনাবেলার ক্যাপাবিলিটি এনহান্সমেন্ট(২সিই)।
এছাড়াও আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারী দিনব্যাপী একটি স্ট্র্যাটেজিক লেভেল সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বাংলাদেশসহ ২২টি দেশের মোট ১৩১৯ এর বেশী অংশগ্রহণকারী যোগদান করবেন।
দেশসমূহ হলো ঃ অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, বসনিয়া-হারজেগভিনা, কানাডা, ফিজি, ঘানা, গ্রেট ব্রিটেন, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, কর্ঘিজস্তান, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, পেরু, ফিলিপাইন, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সিয়েরালিওন, দক্ষিন কোরিয়া, শ্রীলংকা, ইউএসএ এবং ভিয়েতনাম।
অনুশীলন শান্তিদূত-৪ এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্যে আঞ্চলিক বন্ধন, নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দক্ষতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। ফিল্ড ট্রেনিংইভেন্ট প্রশিক্ষনে বিভিন্ন ধরনের লেইন ট্রেনিং এর পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাস্তবধর্মী পরিস্থিতির আলোকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। উক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অবলোকন করার জন্য ইউএন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা সার্বক্ষনিকভাবে উপস্থিত থাকবেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী শীর্ষদেশ সমূহের মধ্যে অন্যতম। বিপসট এর মাধ্যমে প্রদানকৃত উন্নত প্রশিক্ষণ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ভূমিকা পালনে অন্যতম সহায়ক বলে প্রতীয়মান হয়। অনুশীলন শান্তিদূত-৪ এর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক গুন বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা যায়।
উল্লেখ্য, আগামীকাল ২৬শে ফেব্রুয়ারী প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অনুশীলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল(অবঃ) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আরসিডিএস,পিএসসি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশ ও বিদেশের উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক আমন্ত্রিত অতিথি। দু’সপ্তাহ একটানা চলার পর আগামী ১২ই মার্চ উক্ত অনুশীলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড.গওহর রিজভী -আইএসপিআর।