॥মাতৃকন্ঠ ডেস্ক॥ আজ ১ জানুয়ারি, রোববার, ২০১৭ সালের প্রথম দিন। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। পুরনো বছরের অর্জনগুলোকে সাথে নিয়ে আর ব্যর্থতা-গ্লানিকে মুছে ফেলে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নববর্ষের প্রথম দিনটি উদযাপিত হবে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ তথা সমগ্র বিশ্বের সুখ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করা হবে এই দিনটিতে। নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীসহ সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনো। খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০১৭ সবার জীবনে আনন্দ ও কল্যাণ বয়ে আনুক- এই কামনা করে গতকাল শনিবার দেয়া এক বাণীতে তিনি আরো বলেন, আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে আসে খ্রিস্টীয় নববর্ষ। অতীত অর্জন ও সাফল্যকে ভিত্তি করে উনড়বতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবÑএ হোক নতুন বছরের সকলের অঙ্গীকার। রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, বছর ঘুরে খ্রিস্টীয় নববর্ষ আমাদের মাঝে সমাগত। বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। কালের বিবর্তনে খ্রিস্টীয় নববর্ষ উদ্যাপন আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। বিগত বছরের সুঃখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে নতুন সম্ভাবনার পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাকÑখ্রিস্টীয় নববর্ষে এ প্রত্যাশা জানিয়ে বাণীতে তিনি বলেন, এদিন দেশব্যাপী নানা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করা হয়। সকলের মাঝে জাগে প্রাণের নতুন স্পন্দন। এই বিশেষ দিনটিকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন ক্ষুদে বার্তা ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়েছে। বিভিনড়ব কর্পোরেট, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনও প্রতি বছর নিকটজনদের কাছে শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান করে থাকে। এই দিনটিতে বিদায়ী বছরের সাফল্য ও ব্যর্থতা ফিরে দেখা হয় এবং নতুন বছরে কিভাবে লক্ষ্য অর্জন করা যায়, সেজন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বছরের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পাদন করার জন্যও কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়। ২০১৬ সাল বাংলাদেশের জন্য ছিল একটি লক্ষ্যণীয় সাফল্যের বছর। রাজনীতি, অর্থনীতি, কৃষি ও পর্যটন ও মধ্যম আয়ের দেশে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির সাফল্য ছিল উল্লেখযোগ্য। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হয়েছে ২০১৬ সাল। আগের বছরগুলোর মতো এ বছরটিতে হরতাল ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ছিল না। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় ছিল সারাটি বছর জুড়ে। ফলে অন্যান্য সময়ের তুলনায় দেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে গেছে এবং ক্ষুদ্র অর্থনীতি নির্দেশকে নতুন অনেক রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী বছরে রেকর্ড পরিমাণ জিডিপি ৭ দশমিক ১১ ও মাথাপিছু গড় আয় সর্বোচ্চ রেকর্ড ১ হাজার ৪৬৫ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর সূত্র জানায়, গত নভেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩৮, যা ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮। ব্যাংকের রিজার্ভও ৩২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ছিল, যা একটি রেকর্ড। ২০১৬ সালে কৃষি ক্ষেত্রেও ব্যাপক সাফল্য দেখা গেছে। এ সময় কৃষকরা খাদ্যশস্যে শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদাই মেটায়নি, বিদেশেও তা রফতানি হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে সবজি উৎপাদনে তৃতীয় ও মাছ উৎপাদনে ৪র্থ স্থান অধিকার করেছে। এ ছাড়া কৃষি উৎপাদন ও মূল্য গ্রহণযোগ্য হওয়ায় কৃষক ও ভোক্তা উভয়েই খুশি ছিলেন বিদায়ী বছরটিতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপদেষ্টা ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, ২০১৬ সালে প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলোই ছিল শক্তিশালী। ২০১৭ সালে যা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েক বছরের মতো বিদায়ী বছরেও তথ্য প্রযুক্তি খাত বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল। এতে জনগণের সেবার পরিধি আরো বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের জন্য দেশ সম্মানজনক আইটিইউ টেলিকম ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০১৬’ লাভ করেন। দেশের এমন শক্ত অবস্থানের প্রেক্ষাপটে জাতি আজ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে। জাতি আশা করবে সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ। নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১ জানুয়ারির বরণলগ্ন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হয় সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য পোশাক ও সাদা পোশাকে নিয়োজিত ছিলো।