শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৩:৪২ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

সরকারী সহযোগিতা পেলে রাজবাড়ী স্নেক ফার্ম দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে

  • আপডেট সময় শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬

॥শিহাবুর রহমান॥ সাপ দেখে ভয় পায়না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু এই সাপই হতে পারে অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত। সেই স্বপ্নই দেখছেন রাজবাড়ী স্নেক ফার্মের কয়েক যুবক। এখন শুধু দরকার সরকারী বা বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা। সেটি পেলেই দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করেন তারা।
২০১৩ সালে রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের কাসাদহ গ্রামে বাড়ীর পাশেই ৮৩ শতাংশ জমির ওপর হাতে গোনা কয়েকটি সাপ নিয়ে গড়ে তোলেন সাপের খামার। নাম দেন “রাজবাড়ী স্নেক ফার্ম অ্যান্ড সরীসৃপ পার্ক”। এখানেই থেমে থাকেনি রনজু। বিভিন্ন স্থানে সাপের প্রদর্শনী ও সর্প মেলায় অংশ নিয়ে সাপ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটাও করে চলেছেন তিনি। ২০১৫ সালের ২৪শে জুন জেলা সমবায় কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে “রাজবাড়ী সাপের খামার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি” নামে নিবন্ধন(নিবন্ধন নম্বর রা-৪৭) নিয়েছেন। কিন্তু সরকারী সহযোগিতা পাননি।
এ এলাকার মানুষ এখন আর কেউ সাপ মারে না। সাপ দেখলেই তাদের ফার্মে খবর দেয় তারা। তার মতে প্রাণি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা থাকলে এদের চেয়ে ভাল বন্ধু আর কেউ হতে পারে না। তেমনি সাপও একটি ভাল বন্ধু। তিনি সেটি প্রমাণও করেছেন।
সাপ প্রেমি রনজু মল্লিক বলেন, সাপ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই কোন ধারণা নেই। যেমন দাঁড়াস সাপ। দাঁড়াসের প্রিয় খাদ্য হচ্ছে ইদুর। তাই ইংরেজীতে এর নাম হচ্ছে র‌্যাট স্নেক। এটি র্নিবিষ একটি সাপ। অস্ট্রেলিয়ায় গম ক্ষেতে ইদুরের আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য তারা দাঁড়াস ছেড়ে দেন। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র ভিন্ন। দাঁড়াস দেখলেই মানুষ লাঠিশোঠা নিয়ে মারার জন্য এক হয়ে যায়। সাপ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় আমাদের দেশ থেকে দাঁড়াসের মতো পরিবেশ বান্ধব সাপ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ৪০টির মতো সাপ। এর মধ্যে রয়েছে চন্দ্রবুরা, অজগর, নাজা কাউথিয়া ও কালকেউটে, নাজা ও খয়াগোখরা, স্যন্ডবুয়া, বালিবুরা, বেবি ও দাঁড়াস।
খামারের সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, সাপের খামারের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া খুবই উপযোগী। অন্য দেশের তুলনায় এ দেশে সাপের খামারে বিষ সংগ্রহ ও সংরক্ষণও অনেক সহজ। এজন্য দরকার আধুনিক ল্যাব ও রপ্তানী বুরে‌্যার ছাড়পত্র। আমরা ১হাজার সাপের জন্য একটি প্রজেক্ট ফাইল তৈরী করেছি। এর জন্য প্রয়োজন ১ কোটি ৩১লক্ষ টাকা। প্রজেক্টটি করতে পারলে এ থেকে বছরে আয় হবে প্রায় ২কোটি টাকা। তবে পরের বছর থেকে খরচ কমে দাঁড়াবে ৪০লক্ষ টাকায়। আমরা এই প্রজেক্ট ফাইলটি বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিবো। আমরা সরকারী বা বেসরকারী সহযোগিতার প্রত্যাশা করছি। এটি পেলে এ প্রজেক্ট সফল করা সম্ভব।
রাজবাড়ী সরকারী কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান প্রভাস চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সাপ পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাপের বিষ দিয়ে অত্যন্ত মূল্যবান এ্যান্টিভেনন তৈরী করা হয়। যেকোন সাপ কামড়ালে এই এ্যান্টিভেনন প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং রোগীকে বাঁচানো যায়। এছাড়াও সাপের বিষ থেকে তৈরী হয় ক্যান্সারের ওষুধ। সরকারী অনুমোদন ও সহযোগিতা পেলে ওরা সাপ ও সাপের বিষ বিদেশে রপ্তানী করতে পারবে। সেটা দেশের জন্য খুবই লাভজনক হবে। সেটি পেলে ওরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। আর সরকারী সহযোগিতা পাওয়া ওদের জন্য খুবই দরকার। তা না হলে ব্যক্তিভাবে এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানের অনুমতি পাওয়া বা এগিয়ে যাওয়া কোনটাই সম্ভব না।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ গনেশ চন্দ্র মন্ডল জানান, এখনো পর্যন্ত রাজবাড়ী স্নেক ফার্মে কোন সরকারী সহযোগিতা করা হয়নি। কারণ বন বিভাগ ও আমাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে কারা এটি দেখভাল করবে। তবে সম্প্রতি আমাদের কাছে চিঠি এসেছে এটি বাণিজ্যিকীকরণ করার।
দৈনিক মাতৃকন্ঠের সাথে আলাপকালে সেই স্বপ্নের কথাই জানালেন রাজবাড়ী স্নেক ফার্মের প্রধান উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম ওরফে রনজু মল্লিক।
এদিকে গত ২৫শে ডিসেম্বর বিকেলে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আশরাফ হোসেন রাজবাড়ী স্নেক ফার্ম পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি স্নেক ফার্মের প্রধান উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম ওরফে রনজু মল্লিকের সাথে কথা বলেন এবং ফার্মের সরকারী সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!