॥শিহাবুর রহমান॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় উদ্বুদ্ধ ও আরো মনোযোগী করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন ইউপির ও জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান মোঃ শওকত হাসান।
গতকাল ১৮ই অক্টোবর দুপুরে আলীপুর ইউপির ইন্দ্রনারায়নপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষা উপকরণ তুলে দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। একই সাথে মা ও অভিভাবক সমাবেশেরও আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নুরমহল আশরাফী, জেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী, জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ নাজমুল হাসান মিন্টু ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আলমগীর হোসাইন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজক আলীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাব, আলীপুর ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য আঃ জব্বার, আলীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিঠু শেখ, স্থানীয় অভিভাবক আলহাজ্ব দিদার খান, আলাদীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার, সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিবর্তনের সভাপতি আঃ হান্নান খান ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্রী খাদিজাতুল কোবরা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন সোলাইমান কবিরাজ। অনুষ্ঠানে ২শত শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হাসানের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, সত্যিই এটি একটি মহতী উদ্যোগ। তার মধ্যে দেশপ্রেম আছেই বলেই তার মাথা থেকে এ রকম একটা চিন্তা বের হয়েছে। তেমনি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও মাতৃকালীনভাতাসহ অন্যান্য ভাতা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাথা থেকে এসেছে। তিনি মেয়েদের ডিগ্রি পর্যন্ত লেখাপড়া ফ্রি করেছেন। এটাও কিন্তু শেখ হাসিনার মাথা থেকে এসেছে। এর আগে কেউ এটা করেনি। তিনি স্কুলটিতে একটি নতুন ভবন চলতি অর্থ বছরের মধ্যে করে দেয়ার জন্য ঘোষণা দেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নুরমহল আশরাফী বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন বাংলাদেশের একটা বাচ্চাও বাদ থাকবে না সকলেই স্কুলে যাবে। এখন প্রত্যেকটা বাচ্চাই স্কুলে যায়। পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ বছরের প্রথম তারিখে প্রত্যেকটা স্কুলে বিনামূল্যে বই পৌছে দেয়। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও এমন নজির নেই।
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক বাতির উদ্ভাবক টমাস আলভা এডিসনের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, বাল্যকাল থেকেই এডিসন ছিলেন অধিক জ্ঞানের অধিকারী। একদিন স্কুল থেকে শিক্ষকরা তার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বলেন এটি তোমার মাকে দিবে। এডিসন সেই চিঠি বাড়ীতে এসে তার মাকে দেন এবং চিঠিতে শিক্ষকরা কি লিখেছে জানতে চান। এ সময় তার মা চিঠি পড়ে কেঁদে ফেলে এবং তাকে বলেন শিক্ষকরা বলেছেন তুমি অত্যন্ত মেধাবী তোমাকে আর স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এরপর থেকে তার মা’ই তাকে পড়াশুনা করাতো। উনবিংশ শতাব্দীতে এডিসন ইতিহাসের অন্যতম একজন বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচিত হয়ে উঠেন। তার মা মারা যাওয়ার পর একদিন তিনি মায়ের সব জিনিসপত্র দেখতে গিয়ে স্কুলের শিক্ষকদের পাঠানো সেই চিঠি পান। চিঠিটি পড়ে দেখেন শিক্ষকরা তার মাকে বলেছিলেন আপনার সন্তানকে আর স্কুলে পাঠাবেন না। কারণ এডিসন অকর্মা। ওর দ্বারা লেখাপড়া হবে না।
গল্পটি বলার উদ্দেশ্যে হলো যে এডিসনকে অকর্মা বলে আখ্যায়িত করে স্কুলে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। সেই অকর্মাকেই তার মা ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী তৈরী করেছিলেন। একজন মায়েই পারে একজন এডিসন তৈরী করতে। কাজেই সন্তানকে মানুষ করে গোড়া তোলার দায়িত্ব তার মাকেই নিতে হবে।
ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হাসান বলেন, আমি আলীপুর ইউনিয়নকে একটি মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শুধু রাজবাড়ীর মধ্যেই নয় দেশের মধ্যে একটি উন্নত মডেল ইউনিয়ন গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমার। আমি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে সড়ক বাতির ব্যবস্থা করেছি। ওই লাইটের বিলও কিন্তু আমার ইউনিয়নবাসী পরিশোধ করে। আমি আমার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে শিক্ষার্থী পড়ালেখায় আরো মনোযোগী হয়।
তিনি বলেন, আমি পরীক্ষার সময় প্রত্যেকটি ছাত্র-ছাত্রীর বাড়ীতে গিয়ে খবর নেই, তারা ঠিকমতো পড়ালেখা করছে কিনা। কোন সমস্যা আছে কিনা। আপনারাও ছেলে মেয়েদের ঠিক মতো দেখা শুনা করবেন যাতে ওরা ভাল মানুষ হতে পারে। সু-শিক্ষিত হতে পারে।