॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আমিনুল হক গতকাল ১৩ই সেপ্টেম্বর হত্যা মামলার রায়ে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের নাওডুবি গ্রামের আলোচিত গৃহবধু শাহানারা বেগম ওরফে দুলি (৩৮)কে জবাই করে হত্যার দায়ে ঘাতক স্বামী আব্দুর রশিদ (৪৭)কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন। তবে এ মামলার চার্জশীটভূক্ত ২নম্বর আসামী কথিত পরকীয়া প্রেমিক আজম মন্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন।
বিগত ২০১২ সালের ৩০শে নভেম্বর গভীর রাতে আজম মন্ডলের সাথে পরকীয়ার জেরে স্ত্রী শাহানারা বেগম ওরফে দুলিকে গলাকেটে হত্যা স্বামী আব্দুর রশিদ। দীর্ঘ সাড়ে ৫বছর পর মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন। সাজাপ্রাপ্ত আব্দুর রশিদ পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের মুকুন্দিয়া গ্রামের মৃত গফুর সরদারের ছেলে।
জানাযায়, নাওডুবি গ্রামের মৃত জিলাল মিয়ার মেয়ে শাহানারা বেগম দুলির সাথে ঘটনার ২৫বছর পূর্বে সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের মুকুনদিয়া গ্রামের গফুর সরদারের ছেলে আব্দুর রশিদ সরদার (৪৫)-এর বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের বড় মেয়ে রওশনারা বেগমের পাশ্ববর্তী বাগমারা গ্রামে মোঃ নাসির মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। আর ছোট মেয়ে তাহমিনা খাতুন(১৩) সূর্য্যনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেনীতে লেখাপড়া করে। স্বামী রশিদ সরদার পারিবারিক স্বচ্ছলতা আনতে ঘটনার আড়াই বছর পূর্বে শ্বশুরালয়ের টাকায় দুবাই যায়। এ সময় উক্ত দুই মেয়েসহ স্ত্রী দুলি বেগম পিতার বাড়ীতে ওঠেন। স্বামী বিদেশ যাবার পর দয়ালনগর গ্রামের আজম মন্ডলের সাথে দুলি অবৈধ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। রশিদ দুবাই থেকে বাড়ীতে আসলে তিনিও শ^শুর বাড়ীতে থাকতেন। তিনি দেশে আসার পরও আজমের সাথে তার স্ত্রীর পরকীয়া চলতে থাকে। প্রতিবাদ করলে আজম তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এ নিয়ে স্ত্রীর সাথে রশিদের মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।
ঘটনার দিন দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে রশিদ সরদার বাড়ীতে এসে “রওশনারার মা দরজা খোল” বলে ডাক দেয়। এ সময় দুলি বেগম দরজা খুলে দিলে রশিদ সরদার ঘরে ঢোকে। তখন তাদের দু’জনের কথা কাটাকাটি হয়। পরে তারা দু’জন ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পরে ওই রাতেই প্রতিবেশী হান্নার মোল্যার ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে স্ত্রী শাহানাকে ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে রশিদ।
এ বিষয়ে দুলি বেগমের ভাই নাওডুবি গ্রামের মোঃ তারা মিয়া বাদী হয়ে ঘাতক স্বামী মোঃ আব্দুর রশিদ সরদারসহ অজ্ঞাত ২/৩জনকে আসামী করে রাজবাড়ী থানায় মামলা নং-১, তাং-১/১২/২০১১, ধারাঃ ৩০২/৩৪ দঃ বিঃ দায়ের করে। মামলায় আজমের পরকীয়া হত্যাকান্ডের কারণ হিসেবে বর্ননা করা হয়। এ হত্যাকান্ডের একদিন পর রাজবাড়ী থানার ইন্সেপেক্টর(তদন্ত) মোঃ আনিসুর রহমান শহরের বড়পুর এলাকা থেকে আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করে।
পরে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রাজবাড়ী থানার সাবেক ইন্সেপেক্টর(তদন্ত) মোঃ আনিসুর রহমান মামলার সাক্ষী হিসেবে ঘাতক আব্দুর রশিদের দুই মেয়ে এবং আসামী আব্দুর রশিদ আদালতে পাঠালে তারা ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। জবানবন্দীতে দুলি হত্যার কারণ হিসেবে আজম মন্ডলের পরকীয়ায় বর্ননা হয়।
ঘাতক আব্দুর রশিদ স্বীকারোক্তিতে বলেন বলেন, “হেই (স্ত্রী দুলি) কইছে আমার লগে আর সংসার করবো না। এহন থ্যাইকা আজমের (পরকীয়া প্রেমিক) লগে থাকবো। কথাডা শুননের পর থ্যাইকা মাথাডা গরম হইয়া ছিল। বাড়ী থ্যাইকা আহনের পথে খানখানাপুর বাজার তোন ছাগল কাটার কথা কইয়া দেড় শ টাহা দিয়ে ছুরি কিইনা আইনা বউরে(স্ত্রী) জবাই করছি। এহন আর গ্যারামের মানুষ আমারে যা তা কতা কইতে পারবো না। বউরে লাইয়া হেরা (গ্রামের মানুষ) আমারে কত কতাই না কইছে। দুই টা মাইয়ার মুখের দিক তাকাইয়া কাউরে কিচ্ছু কই নাই। আমি একটা পাপীরে মারছি। এহন আমার আর কোন কষ্ট নাই।” ঘটনার রাতে “কথা আছে” বলে দুলিরে মাঠের মধ্যে নিয়ে যাই এবং মেলামেশার কথা বলে তাকে মাটিতে শোয়াইয়া প্রথমে তার গায়ের ব্লাউজ খুলে গলায় ফাঁস দিয়ে পকেট থেকে ছুরি বের করে জবাই করে তাকে হত্যা করি।
এ মামলার রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবি পিপি এডঃ মোঃ উজির আলী শেখ জানান, এ হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত একমাত্র আসামী আব্দুর রশিদসহ আজম মন্ডলকে আসামী করে চার্জশীট প্রদান করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। দীর্ঘ ৫বছর পর গতকাল ১৩ই সেপ্টেম্বর এ মামলার রায়ে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আমিনুল হক দোষী সাব্যস্ত করে আব্দুর রশিদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। তবে আজম মন্ডলের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাকে মামলা থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।