॥স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বন্যাদুর্গতদের সকল প্রকার সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে আজ বলেন, ‘দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বন্যাদুর্গতদের সকল প্রকার সহযোগিতা দিতে হবে।’
সচিবালয়ের কার্যালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকের পর সংবাদকর্মীদের ব্রিফিং করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এমন আশঙ্কা থাকায় প্রধানমন্ত্রী তাদের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের একটি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বন্যা দীর্ঘায়িত হলে যে কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিশেষত মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের তাদের কর্মস্থলে থাকাকালীন সর্বদা প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের সজাগ থাকতেও বলেছেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়ার একদিন পর আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক নিয়মিত বৈঠক থেকে এই নির্দেশনা এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বৈঠকে যোগ দেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং সচিবরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সচিবালয় থেকে সংযুক্ত হন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বন্যা পরিস্থিতি এবং ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ লোকদেরকে আশেপাশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় আশ্রয়ের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং তাদের জন্য সব ধরণের ত্রাণ সামগ্রী, বিশেষত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং ওরাল স্যালাইনের ব্যবস্থা করা এবং গবাদি পশুগুলোর জন্য নিয়মিত টিকা দেয়া নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আনোয়ারুল বলেন, বন্যার সময় শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের সরকারী কর্মচারীদেরকে তাদের কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বন্যা মোকাবেলায় মাঠপর্যায়ে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, চলমান বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার প্রেক্ষিতে এ লক্ষ্যে অতিরিক্ত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ত্রাণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ত্রাণ সামগ্রীর মজুদ সম্পর্কে তাদের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মজুদে প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে ফলে ত্রাণ বিতরণে কোনও সমস্যা হবে না।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী সম্ভাব্য দীর্ঘায়িত বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তাদের ব্যাপক প্রস্তুতির বিবরণ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী কৃষিমন্ত্রীকে আমন ও রোপা আমন (টি আমন) এর বাম্পার উৎপাদনকে বন্যার সময় কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব তার অভিজ্ঞতার বরাত দিয়ে বলেন, ১৯৮৮ সালে এবং ১৯৯৮ সালের বন্যার পরে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল তখন তিনি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন।
আনোয়ারুল এসময় প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “যদি চলমান বন্যায় আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবে বন্যার পরে পলি জমার কারণে রোপা আমনের বাম্পার উৎপাদন হতে পারে।”
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পানি থাকার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও বন্যার কারণে নিম্নভূমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কৃষিমন্ত্রী বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে ফসল উৎপাদন (আমন ও টি আমন) সম্পর্কে গ্রহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেছেন।
সরকারের শীর্ষ আমলা আরো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বন্যার পরে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগাম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।