॥মাহবুব হোসেন পিয়াল॥ গোয়ালন্দে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা যাওয়া এক সন্তানের জননী গৃহবধু আইভি আক্তার(২৩) এর লাশ দাফনে স্থানীয়রা বাঁধা দেয়ায় মরদেহ তার পিতার বাড়ি ফরিদপুরের মাচ্চর ইউনিয়নের দয়রামপুর গ্রামে দাফন করেছে ফরিদপুরের কোতয়ালী থানার পুলিশ।
কোতয়ালী থানার পুলিশ জানায়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ওই নারী গত ৩রা মে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এরপর তার লাশ সেখান থেকে প্রথমে তার শ্বশুড় বাড়ী রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পৌর এলাকার আলম চৌধুরীর পাড়ায় দাফন করতে গেলে স্থানীয় লোকজন বাঁধা দেয়। পরে তার মরদেহ ফরিদপুরের কোতয়ালী থানাধীন মাচ্চর ইউনিয়নের দয়রামপুর এলাকার পিতা আদেল বেপারীর বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়।
খবর পেয়ে গত ৩রা মে ভোরে ফরিদপুর কোতয়ালী ওসি মোর্শেদ আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়ীটিকে লকডাউন করে বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাই জানাযা পরিয়ে স্থানীয় কবরস্থানে কবর খুড়ে ওই গৃহবধুর দাফন সম্পন্ন করে। এছাড়াও ওই পরিবারকে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়।
গোয়ালন্দের স্থানীয় সুত্র জানায়, গত ১১ই এপ্রিল গৃহবধু আইভি আক্তার গোয়ালন্দে তার শ্বশুড় ফয়েজ শেখের বাড়ীতে অসুস্থ্য হলে পড়লে স্বামী বাবু লাল শেখ(৩০) তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ফরিদপুর থেকে গত ১৭ই এপ্রিল তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শরীরে করোনা ভাইরাস পজেটিভ ধরা পড়ে। এরপর তাকে গত ২০শে এপ্রিল ঢাকা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রেফার হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩রা মে তার মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আসিফ মাহমুদ জানান, বিভিন্ন সূত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গোয়ালন্দের গৃহবধু আইভি আক্তারের মৃত্যুর সংবাদ জেনেছি। তার লাশ দাফনে স্থানীয়দের আপত্তি থাকায় লাশ ফরিদপুরে তার বাবার বাড়ি এলাকায় নিয়ে দাফন করা হয়েছে। ওই গৃহবধুর স্বামীর বাড়ি যেহেতু গোয়ালন্দে তাই ওই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোরর্শেদ আলম বলেন, “পুলিশ জনগনের বন্ধু। দেশের এই বিপদময় সময়ে করোনা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়েছে বা মারা গেছে শুনলেই তার আপনজন দূরে পালিয়ে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থাকায় এটি পুলিশের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। আর সেই দায়িত্ব বোধ থেকেই পুলিশ লাশ দাফনের কাজটি করেছে”।