॥মোক্তার হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউপির কেয়াগ্রামে আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ ও ইউসুফ শেখ দুইটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মারধর, বাড়ী-ঘর ও দোকানপাটে হামলা-ভাংচুর ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে।
এতে পৃথক ঘটনায় উভয় পক্ষের ৫জন কমবেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে নসির উদ্দিন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও কামাল মন্ডল পাংশা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানাগেছে, গত ১৪ই জুন বিকেলে কেয়াগ্রাম বাজারে কামাল মন্ডল নামের ব্যক্তিকে মারধর করে ইউসুফ শেখ গ্রুপের লোকজন। এ নিয়ে সৃষ্ট গোলযোগে ওইদিন সন্ধ্যায় আবু সাঈদের গ্রুপের লোকজন ইউসুফ শেখের বাড়ী ও তার ভাই দুলাল শেখের দোকানসহ কমবেশী ২০টি বাড়ী-ঘর ও দোকানপাট ভাংচুর ও লুটতরাজ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে পাংশা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোফাজ্জেল হোসেনের নেতৃত্বে পাংশা থানা ও কসবামাজাইল ক্যাম্পের পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
এরআগে গত ৯ই জুন সন্ধ্যায় কসবামাজাইল ইউপির ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সাঈদের উপর হামলা চালায় ইউসুফ শেখ গ্রুপের লোকজন। এ ছাড়া গত ১৪ই জুন বিকেলে কেওয়াগ্রাম বাজারে কামাল মন্ডলকে মারধর করে আহত করে ইউসুফ শেখ গ্রুপের লোকজন। এর কয়েকদিন আগে প্রতিপক্ষের লোকজনের হামলার শিকার হন তছির উদ্দিন, আনিছ ও শাহিন। এ নিয়ে ইউসুফ শেখ ও আবু সাঈদ গ্রুপের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে কেওয়াগ্রাম বাজারস্থ সিলামত, রাজিব, ওহাব ও রফিকুল ইসলামের মুদিখানা দোকান ভাংচুরের চেষ্টা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন।
এসব নিয়ে গত ১৫ই জুন সকালে কেওয়াগ্রাম বাজারে জনপ্রতিনিধি, উভয়পক্ষের নেতৃস্থানীয় লোকজনসহ গ্রামবাসী লোকজনের সমন্বয়ে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে বৈঠকের কথা হয়। কিন্তু এর আগেই গত ১৪ই জুন বিকেলে কেওয়াগ্রাম বাজারে কামাল মন্ডলকে মারধর করে আহত করার ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যায় ক্ষুব্ধ দেড় দুইশত লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে ইউসুফ শেখসহ তাদের অনুসারী ২০টি বাড়ী-ঘর ও দোকানপাটে হামলা-ভাংচুর চালায়। ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন ঃ ইউসুফ শেখ ও তার ভাই দুলাল শেখ, মিরাজ, আরিফ, মুল্লুুক, আফসার উদ্দিন, আলম, নাসির উদ্দিন, সোলেমান, বাচ্চু, টুকু, সজল, বিল্লাল, গোলাম নবী, আজগর আলী, নুজদার আলী ও আব্দুর রাজ্জাক।
এ ব্যাপারে ইউসুফ শেখ জানান, তিনি কৃষক লীগ করেন। গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সমর্থনে বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানের পক্ষে কাজ করেন। যার কারনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জর্জ আলী বিশ্বাসের সমর্থিত লোকজনের সাথে তার সামাজিক বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান পিল্টু জানান, ইউসুফ শেখের নেতৃত্বে তাদের অনুসারী লোকজন প্রায়ই জর্জ আলী বিশ্বাসের সমর্থিত লোকজনকে মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল। তারা ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সাঈদকে মারধর ও মসলেম উদ্দিনের বাড়ী ভাংচুর করে। গত ১৪ই জুন বিকেলে কামাল মন্ডলকে মারধরের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করতে গিয়ে কয়েকটি বাড়ীঘরে ও দোকানে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কসবামাজাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান খান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কসবামাজাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান খান তুচ্ছ ঘটনায় বাড়ী-ঘর, দোকানপাটে হামলা-ভাংচুরের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে পাংশা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন জানান, গত ১৪ই জুন সন্ধ্যায় কেওয়াগ্রামে সংঘর্ষের খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। থানায় ক্ষতিগ্রস্তরা কেউ এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেন নাই। তিনি আরো জানান, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।