॥এম.এইচ আক্কাছ॥ রহস্যজনকভাবে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ১৬ ঘণ্টা পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোয়ালন্দ উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোঃ সাইফুল ইসলাম শামীম(৪৩) মারা গেছে।
গতকাল ২৭শে মার্চ সকাল ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। আগের দিন বৃহস্পতিবার(২৬শে মার্চ) বিকাল ৪টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কোয়ার্টারের দ্বিতীয় তলায় নিজের কক্ষে তিনি অগ্নিদগ্ধ হন। আগুন লাগার সঠিক কারণ জানা যায়নি। স্থানীয়রা ঘটনাটি রহস্যজনক মনে করছে।
জানা গেছে, মোঃ সাইফুল ইসলাম শামীম প্রায় ৫ বছর যাবৎ গোয়ালন্দ উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কোয়ার্টারের দ্বিতীয় তলায় তিনি সপরিবারে থাকতেন। করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুদিন আগে পরিবারকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গ্রামের বাড়ীতে রেখে আসেন। ঘটনার দিন দুপুরের খাবার খেয়ে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ তার গোঙানীর শব্দ শুনে পাশের রুমের লোকজন তার রুমের সামনে যায়। এ সময় দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় তারা রুমের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শরীর ঝলসানো অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ সময় তার রুমটি ধোঁয়ায় আছন্ন ছিল। উদ্ধারের পর প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আসিফ মাহমুদ অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সাইফুল ইসলাম শামীমকে উদ্ধারকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাইট গার্ড তারিকুল ইসলাম বলেন, তার গোঙানীর শব্দ পেয়ে আমরা রুমের সামনে গিয়ে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখে দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করি। ততক্ষণে তার সারা শরীর আগুনে ঝলসে গিয়েছিল।
নিহত সাইফুল ইসলাম শামীম ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পূর্ব গন্দারদিয়া গ্রামের মৃত আঃ মান্নান শেখের ছেলে। সাইফুলের শ্যালক মিজানুর রহমান জানান, গ্রামের বাড়ীতে তার স্ত্রী এবং ১১ বছর ও সাড়ে ৩ বছর বয়সী ২টি ছেলে রয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আসিফ মাহমুদ বলেন, সাইফুল ইসলামকে সারা শরীর আগুনে ঝলসানো অবস্থায় তার রুম থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে তিনি মারা যান। পরে ঢাকায় তার মরদেহের ময়না তদন্ত করা হয়।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় বিভিন্ন সুত্র জানায়, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোঃ সাইফুল ইসলাম শামীমের সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ভালে সম্পর্ক ছিল না। অফিসের বিভিন্ন বিষয়ে সাইফুল ইসলাম ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তাকে অপছন্দ করাসহ বদলীর চেষ্টাও করা হয়। যা অফিসের কারো অজানা নয়। তার রহস্যজনক অগ্নিদগ্ধ হওয়া ও মৃত্যু পর এ সকল বিষয় এখন জনসন্মুখে বের হচ্ছে। উদ্ধারকারী নাইট গার্ড তারিকুল ইসলামের কর্মকান্ড নিয়েও স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ।
নিহতের শ্যালক মিজানুর রহমান, সাইফুলের মৃত্যুর ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানিয়েছেন।
গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোঃ সাইফুল ইসলাম শামীমের রুমে একটি রাইসকুকার এবং ফোন চার্জার ছাড়া অন্য কিছু ছিলো না। তবে সেখান থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে কিনা সেটা জানা জায়নি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হাসান শিপলু জানান, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোঃ সাইফুল ইসলাম শামীমের মৃত্যু নিয়ে বেশ রহস্য রয়েছে। তার পরিবার যদি মনে করে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।