॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাতিজার মারপিটে আহত চাচা শুকুর আলী মোল্লা(৬৫) গতকাল ১৬ই ফেব্রুয়ারী সকালে ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।
শুকুর মোল্লা উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নবুওসিমদ্দিন পাড়ার মৃত গোহর মোল্লার ছেলে। মারপিটের ঘটনাটি ঘটে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী সকালে বাড়ির সামনে।
গতকাল রবিবার নিহত শুকুর মোল্লার ছেলে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় অভিযুক্ত শুকুর মোল্লার ছোট ভাইয়ের ছেলে সাগর মোল্লার ছেলে ভাতিজা দেলোয়ার মোল্লা(২২) ও আরেক ছোট ভাই খোরশেদ মোল্লার ছেলে ভাতিজা খলিল মোল্লা(৪০) ও তার স্ত্রী রীনা বেগমকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ এ ঘটনায় খলিল মোল্লার স্ত্রী রীনা বেগম (৩৫)কে গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল রবিবার দুপুরে নিহত শুকুর মোল্লার বাড়িতে দেখা যায়, তার স্ত্রী জামেলা বিবিসহ পরিবারের সবাই কান্নাকাটি করছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন দেখতে ভিড় করেছে। ঘরের বারান্দায় শুকুর মোল্লার বড় ছেলে জলিল মোল্লা ও ছোট ছেলে মোক্তার মোল্লা শোকে কাতর হয়ে পড়ে আছে। পাশেই জলিল মোল্লার স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যরা হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছে। তাদেরকে স্থানীয় লোকজন শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের বাড়ি পাশাপাশি।
অভিযুক্ত দেলোয়ার মোল্লা ও চাচাতো ভাই খলিল মোল্লার বাড়িতে কেউ নেই। ঘরের দরজায় তালা মারা রয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সকালে শুকুর মোল্লার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
শুকুর মোল্লার স্ত্রী জামেলা বিবি বলেন, বাড়ির সামনে আমাদের জমিতে কয়েকদিন আগে ছোট দুটি দোকান করেন বড় ছেলে জলিল মোল্লা। কয়েক মাস ধরে খাল ভরাট করে দোকান ঘর দুটি করে। কয়েক দিন আগে দোকান দুটি ভাড়া দিলে শরীক দেবর(শুকুর মোল্লার ছোট ভাই) সাগর মোল্লার ছেলে দেলোয়ার মোল্লা বাঁধা দেয়। দেলোয়ার ঢাকায় থেকে কাজ করে। গত শনিবার সকালে দেলোয়ার ও আরেক দেবর খোরশেদ মোল্লার ছেলে খলিল মোল্লাসহ পরিবারের লোকজন একটি দোকান ভেঙে ফেলে। এসময় বাধা দিতে গেলে আমার স্বামীকে বেদম মারধর করে।
শুকুর মোল্লার বড় ছেলে জলিল মোল্লা অভিযোগ করেন, বাড়িতে আমি ও বাবা-মা ছাড়া কেউ থাকে না। ছোট দুই ভাই ঢাকা থাকে। কয়েক মাস ধরে আমাদের বাড়ির সামনে খাল ভরাট করে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে দুটি দোকান ঘর তুলে ভাড়া দেই। দুই-তিন দিন আগে ঢাকা থেকে দেলোয়ার ফোন করে দোকান ভাড়া নিতে নিষেধ করে। গত শুক্রবার দেলোয়ার বাড়ি ফিরে আমাদের সাথে ঝগড়া করে। গত শনিবার বেলা সাড়ে দশটার দিকে আমি মাঠে কাজে যাই। এ সময় খবর আসে আমার বাবাকে দেলোয়ার ও তার লোকজন প্রচন্ড মারধর করেছে। পরে জানতে পারি, বাড়ি থেকে বের হয়ে আমার বৃদ্ধ বাবা শুকুর আলী দোকানের সামনে দিয়ে দেখেন দেলোয়ার কোন কথা না বলেই আমাদের দোকান ভাংচুুর করছে। বাবা বাঁধা দিতে গেলে তার(বাবা) হাতে থাকা লাঠি দিয়ে তাকে বেদমভাবে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। তার সাথে আরেক চাচাতো ভাই খলিল ও তার স্ত্রীও ছিল।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোঃ আশিকুর রহমান জানান, সকালে শুকুর মোল্লার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে খলিলের স্ত্রী রানী বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি সবাই পালিয়ে যাওয়ায় অন্য কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় শনিবার প্রথমে মারামারির অভিযোগ পেলেও মৃত্যুর ঘটনায় এখন হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড হচ্ছে।