॥শিহাবুর রহমান॥ রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার পাতুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সিআইডি’র এস.আই আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা হত্যা মামলার রায়ে জরিমানাসহ ৭জন আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৯জনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছে আদালত।
গতকাল ২৯শে জানুয়ারী দুপুরে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাসুদ করিম জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালতে সকল আসামী উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালতে বহু মানুষের সমাগম ঘটে।
যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্তরা হলো ঃ রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার চাঁদমৃগী গ্রামের মৃত গহের শেখের ছেলে রবিউল ইসলাম ওরফে জিরু ও জালাল শেখ, রাকিব শেখের ছেলে তপন শেখ, মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে কুদ্দুস শেখ, সিদ্দিক শেখের ছেলে ডালিম শেখ ও বুলু শেখ এবং একই গ্রামের আকমল শেখ। দন্ডপ্রাপ্তদের ৬জনকে ১লক্ষ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে ১বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং আসামী আকমল শেখকে ৩২৫ ধারার অপরাধে আরো ৫বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে আদালত।
খালাসপ্রাপ্ত আসামীরা হলো ঃ এ মামলার প্রধান আসামী নাদের হোসেন খানের ছেলে রকিবুল ইসলাম ওরফে আকমল, তার ভাই দিদার খান ও বিদার খান, আলীম শেখ, আবুল হোসেন, সুমন, নালিম শেখ ওরফে নালু, রাকিব শেখ ও সিদ্দিকুর রহমান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডির নারায়নগঞ্জ জোনের এস.আই আব্দুর রাজ্জাক ২০১১ সালের নভেম্বরে পবিত্র ঈদ-উল-আযহার ছুটিতে সপরিবারে গ্রামের বাড়ী পাতুরিয়ায় বেড়াতে আসেন। গত ৯ই নভেম্বর রাতের আঁধারে স্থানীয় আসামী পক্ষ দারোগা রাজ্জাক ও তার ভাতিজা জাহিদুল ইসলামের কেনা চাঁদমৃগী মৌজার ৯ শতাংশ জমিতে টিনের ছাপড়া ঘর উত্তোলন করে। এ খবর জানতে পেরে পরদিন ১০ই নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দারোগা আব্দুর রাজ্জাক, তার ভাই শাহজাহান ও আমজাদ এবং ভাতিজা জাহিদুল, শহিদুল ও ডাঃ গোলাম নবী সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ করলে উল্লেখিত আসামীরা তাদেরকে লোহার রড, হাতুড়ি, কাঠের বাটাম ও লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। গুরুতর আহত অবস্থায় দারোগা আব্দুর রাজ্জাককে প্রথমে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও আহতদের মধ্যে ভাতিজা ডাঃ গোলাম নবী দীর্ঘ ১মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ভাই শাহজাহান বেশ কয়েকদিন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে।
এ ঘটনায় নিহত দারোগা রাজ্জাকের স্ত্রী রোকেয়া রাজ্জাক বাদী হয়ে পাংশা থানায় মামলা নং-০৬, তাং-১১/১১/২০১১ইং, ধারাঃ ১৪৩/৩২৪/৩২৫/৩০৭/৩০২/১১৪ দঃ বিঃ দায়ের করেন। মামলায় ১১জনকে এজাহারনামীয় আসামী করা হয়। মামলার আসামীরা হলো ঃ সাওরাইল ইউপি’র সাবেক মেম্বার পাতুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম খান ওরফে আকমল মেম্বার(৫০), তার দুই ভাই মোঃ দিদার খান(৪০) ও মোঃ বিদার খান(৩৭), চাঁদ মৃগী গ্রামের মৃত গহের শেখের পুত্র মোঃ রবিউল ইসলাম ওরফে জিরু((৩০), তার সহোদর মোঃ জালাল হোসেন(২৭), একই গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের দুই পুত্র আবুল হাশেম(৫৫) ও আব্দুল কুদ্দুস(৪২), মোঃ সিদ্দিক শেখের দুই পুত্র বুলু শেখ(২২) ও ডালিম শেখ(২৫), হাশেম আলী শেখের পুত্র সুমন শেখ(২০) ও মোঃ রাকিব শেখের পুত্র তপন শেখ (২০)সহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫জন।
পাংশা থানার এস.আই নিজাম উদ্দিন প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন। পরবর্তীতে এস.আই শাহারুল আলম মামলাটির তদন্ত সমাপ্ত করে ২০১৪ সালে এজাহারনামীয় ওই ১১জন আসামীসহ আরো ৫জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে মোট ১৬জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। একই বছরের ২৪শে ফেব্র“য়ারী আদালতে হত্যা এ মামলার ১৬জন আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
দীর্ঘ ৯বছর পর আদালতে দীর্ঘ শুনানী ও সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণের পর গতকাল ২৯শে জানুয়ারী দুপুরে বিজ্ঞ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
তবে রায়ে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে নিহতের ভাতিজা ডাঃ গোলাম নবী বলেন, এ মামলার প্রধান আসামী ছিলেন নাদের হোসেন খানের ছেলে রকিবুল ইসলাম ওরফে আকমল। তারা পরিকল্পনা করেই আমার ভাই আব্দুল রাজ্জাক মোল্লাকে হত্যা করে। আদালতে রবিউল ইসলাম জিরু তার স্বীকারোক্তিতে সেটা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আদালত ৭জনের যাবজ্জীবন দিয়েছেন এবং অন্যান্যদের বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ঠ নই। আমরা রায়ের কপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে খালাসপ্রাপ্ত আসামীদের বিরুদ্ধে আপীল করবো।
রাষ্ট্র পক্ষের পিপি এডঃ মোঃ উজির আলী শেখ বলেন, রায়ে ৭জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। এতে আমরা খুশি। তবে যে ৯জন খালাস পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
আসামীদের পক্ষে এডঃ মোঃ মোসলেম উদ্দিন খান, এডঃ মোঃ রবিউল আলম ও এডঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক(২) মামলা পরিচালনা করেন।
সিআইডি’র এস.আই আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা হত্যা মামলার রায়ে ৯জন আসামীর খালাস পাওয়ার বিষয়ে প্রসঙ্গে জানতে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান,পিপিএম(বার) দৈনিক মাতৃকণ্ঠকে বলেন, রায়ে কপির পাওয়ার পর মামলার বাদী ও পিপির সাথে আইনগত বিষয় পর্যালোচলার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।