॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বাকী টাকা নিয়ে দোকানীর সাথে বাক বিতন্ডার জেরে ব্যবসায়ী সফিক সরদার(৩০) কুপিয়ে গুরুতর জখম করে মুদি দোকানী ছালাম শেখ গং। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৭শে জানুয়ারী সকালে সফিক মারা যায়।
সফিক গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের আদু মাতুব্বর পাড়ার ইসলাম সরদারের ছেলে ও দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে কসমেটিক্সের ব্যবসা করতো।
পরিবার ও এলাকার লোকজন জানায়, সফিকের বাড়ির কাছেই স্থানীয় ছালাম শেখ এর মুদি দোকান। পরিবারের ছোট খাটো কিছু প্রয়োজন হলে দোকান থেকে নেয়া হতো। কিছু টাকা বাকি থাকলেও পরিশোধ করে ফের প্রয়োজন অনুসারে কিছু নিত। চলতি মাসের প্রথম দিকে সন্ধ্যার পর সফিক সিগারেট আনতে বড় ভাই সহিদুল সরদারের ছেলে সিয়ামকে ১০০ টাকার নোট দিয়ে দোকানে পাঠায়। দোকানী ছালাম শেখ পূর্বের বাকি ৬০টাকা ও সিগারেটের দাম রেখে বাকি টাকা ফেরত দেয়। কম টাকা দেখে ভাতিজার কাছে জানতে চাইলে জানায়, পূর্বের বাকি ৬০ টাকা দোকানী কেটে রেখেছে। এ নিয়ে সফিক দোকানে গিয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে বাক বিতন্ডা হয়। স্থানীয় লোকজন তাদের নিভৃত করে এবং পরে বসে সমাধানের কথা জানায়।
ঘটনার এক সপ্তাহ পর গত ৯ই জানুয়ারী রাত পৌনে ৯টার দিকে মোটর সাইকেলে করে সফিক দৌলতদিয়া বাজার থেকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিল। রাত ৯টার দিকে বাড়ির কাছে স্থানীয় কাদেরের বাড়ির সামনে পৌছলে দোকানী ছালাম শেখসহ তাদের লোকজন গতিরোধ করে দাড়ায়। পথরোধ করার কারণ জানতে চাইলে তাদের হাতে থাকা ধারালো চাইনিজ কুড়াল, চাকু, দিয়ে কয়েকটি কোপ দিলে মাটিতে পড়ে যায়। পরে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে সবাই দৌড়ে পালায়। তাকে গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করে।
এ ঘটনার একদিন পর গত ১১ই জানুয়ারী সফিকের পিতা ইসলাম সরদার বাদী হয়ে রিংকু শেখ(৩৫), ছালাম শেখ(৫৫), ছেলে মোহাম শেখ(২৭), আহম্মদ শেখ(২৫), ছালামের বড় ভাই কাদের শেখ(৬০), তার ছেলে ইউসুফ শেখ(২৩), ছালামের ছোট ভাই মোতালেব শেখ(৪০), তার ছেলে আব্দুল্লাহ শেখ(২১) ও স্থানীয় লুৎফর খা(৩৫) নামের ৯জনকে চিহিৃত করে এবং অজ্ঞাত ৩/৪জনকে অভিযুক্ত করে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হত্যার চেষ্টা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে সফিকের অবস্থার আরো অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবার মীরপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করা হয়। গত ২৭শে জানুয়ারী সকাল ৭টার দিকে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় সফিক মারা যায়। হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর সংবাদ আসলে পরিবারের লোকজনের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। সফিকের মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে অভিযুক্ত সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
নিহত সফিকের বড় ভাই সহিদ সরদার বলেন, আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। ছালাম শেখের দোকানে বিভিন্ন ধরনের নেশাদ্রব্য বিক্রি হয়। এলাকার কিছু খারাপ ছেলেপেলে সেখানে সব সময় আড্ডা দেয়।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, সফিকের মৃত্যুর বিষয়টি জানার পর এখন মারামারি মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হত্যা মামলার আসামী হবেন। মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের জন্য আইনগত প্রস্তুতি চলছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি।