॥আন্তর্জাতিক ডেস্ক॥ নেদারল্যান্ডসের দ্যা হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার ৩দিনের শুনানী শুরু হয়েছে। গতকাল ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এ শুনানী শুরু হয়েছে।
এ শুনানীতে বিবাদী পক্ষের হয়ে লড়বেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি।
এদিকে গত মাসে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)’র পক্ষে গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের গণহত্যা চালানোর অভিযোগ দায়ের করে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের(আইসিজে) সূত্রে জানা যায়, প্রথম দফার শুনানীতে গাম্বিয়া গতকাল মঙ্গলবার এবং মিয়ানমার আজ বুধবার অংশ নেবে।
গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়ে দ্বিতীয় দফার শুনানীতে অংশ নেবে যথাক্রমে কাল বৃহস্পতিবার সকাল ও বিকেলে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামকালে সুচি একসময়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলেন। তিনি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আইকনে পরিণত হয়েছিলেন। জিতেছিলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার।
শুনানীতে অংশ নিতে সুচি গত রবিবার দ্যা হেগে পৌঁছান। তিনি নেপিদো’র কাউন্সিলর দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
অপরদিকে বাদী পক্ষে গাম্বিয়ার এর্টনী জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবুবাকার মারি তামবাদু আইনজীবী প্যানেলের নেতৃত্ব দেবেন।
এদিকে পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দলও তথ্য উপাত্ত নিয়ে শুনানীতে উপস্থিত থাকছেন। প্রতিনিধি দলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিও রয়েছে।
গত সোমবার এক যৌথ কূটনৈতিক বিবৃতিতে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস আইসিজেতে গাম্বিয়াকে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
যৌথ বিবৃতিতে উভয় দেশ জানিয়েছে, তারা গাম্বিয়াকে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন পেতে সব ধরণের সুযোগ কাজে লাগাবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সারভাইভার গ্রুপগুলো মিয়ানমার সরকারের সমর্থনে শুনানীর সময় ডাচ শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার পরিকল্পনা করেছে।
জাতিসংঘ সমর্থিত বিশ্বের শীর্ষ এই আদালতে শুনানী শুরুর একদিন আগে মানবাধিকার গ্রুপগুলো মিয়ানমারকে বয়কট করতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচার নিপীড়নের শিকার হয়ে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর এই ধ্বংসযজ্ঞকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো একে গণহত্যা বলে বর্ণনা করে। কিন্তু মিয়ানমার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের শত-শত গ্রামে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে সেনাবাহিনী এই অভিযান চালিয়েছে।
গত ১১ই নভেম্বর পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে মর্মে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে। দেশটি ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট ওআইসি’র পক্ষে এ অভিযোগ দায়ের করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা থেকে হেগে যাওয়া প্রতিনিধি দল শুনানী পর্যবেক্ষণ করবে ও শুনবে। কিন্তু কোন বিবৃতি দেবে না।
তিনি বলেন, অবশ্য দলটি মানবাধিকার গ্রুপসহ অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া উভয় দেশই ওআইসি’র সদস্য রাষ্ট্র। এছাড়া ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে মিয়ারমারসহ তিন দেশই স্বাক্ষর করেছে।
কনভেনশনে দেশগুলোকে গণহত্যা একযোগে নিষিদ্ধ করেছিল এবং সমস্ত স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রকে গণহত্যার অপরাধ রোধ ও শাস্তি দিতে বাধ্য করে।
মিয়ানমার সামরিক অভিযান চালিয়ে নিজেদের দেশে রোহিঙ্গাদের রক্তাক্ত করে কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে গাম্বিয়া। এতে বলা হয় মিয়ানমারকে তার কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে’।
এর আগে বাংলাদেশ ওআইসি’র পক্ষে গাম্বিয়ার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ওআইসি কিছু দায়িত্ব নিয়েছে। এটি ভালো খবর।